আমার ১৯১৯-China Radio International
যুদ্ধবিরতির পর বৃহত্ শক্তিবর্গ শানতোং প্রদেশের ভাগ্য কীভাবে নির্ধারিত করবে তা দেখার জন্য চীনের মানুষ মাসের পর মাস অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করে বলেছিলেন। ভার্সাই-এর সিদ্ধান্ত জানার পরেই বেইজিংয়ের ছাত্ররা সিদ্ধান্ত নেন যে, তারা জাপান এবং জাপানের পেটোয়া সরকারি লোকজনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে অংশ নেবেন। ৪ঠা মে অর্থাত্ বিক্ষোভের দিন হাজার হাজার ছাত্র জাপান-বিরোধী বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেছিলেন। প্রতিবাদী ছাত্র ও জনতা তাদের বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ান। মিছিল যখন শহর পরিক্রমা করে একটি সরকারি প্রাসাদের সামনে উপস্থিত হয় তখন বিক্ষোভকারীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং তিনজন কুখ্যাত জাপানপন্থি মন্ত্রিকে আক্রমণের মধ্য দিয়ে তাদের জাপান-বিরোধী ক্রোধের অভিব্যক্তি ঘটে। ঠিক সেই সময়ে এই তিনজন মন্ত্রী জাপানি কূটনীতিকদের সাথে গোপন আলোচনা ব্যস্ত ছিলেন। একজন মন্ত্রীর বাড়ি অগ্নিদগ্ধ করা হয় এবং আর একজনকে ক্রুদ্ধ জনতা মারধোর করে। বিক্ষোভকারীরা রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হন। রাষ্ট্রের নিষ্ঠুর দমননীতি এবং বৃহত্তর আন্দোলনের জন্ম দেয়। এই আন্দোলনই আধুনিক চীনের ইতিহাসে ৪ঠা মে আন্দোলন বা May Fourth Movement নামে পরিচিত। পরের দিনই অর্থাত্ ৫ মে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ‘বেইজিং ছাত্র সংগঠন’ তৈরি করে। এই নতুন সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিলো ৪ঠা মে আন্দোলনকে সুষ্ঠুভাবে সংগঠিত করে সমগ্র চীনে তা ছড়িয়ে দেওয়া। সংবাদপত্রগুলি এবং চীনের বিভিন্ন স্তরের মানুষ, বিশেষত বুর্জোয়া শ্রেণীর স্বাধীন অংশ, শিক্ষক, আইনজীবী, শ্রমিক সকলেই ছাত্রদের এই আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।
পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ ধরে ছাত্রবিক্ষোভ সমগ্র চীনে ছড়িয়ে পড়ে। চীনের প্রধান শহরগুলিতে ছাত্রসংগঠন গড়ে ওঠে এবং চীনা ছাত্ররা যাবতীয় জাপানি পণ্য বয়কট করার আহ্বান জানায়। বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলার ছাই ইউয়েন পেই ছাত্র বিক্ষোভকে সমর্থন জানান এবং তার ফলস্বরূপ তাকে পদচ্যুত করা হয়। ছাত্র আন্দোলন দমন করা জন্য পুলিশবাহিনী চূড়ান্ত নিষ্ঠুরতা অবলম্বন করে। পুলিশের নিষ্ঠুর দমননীতির প্রতিবাদে বেইজিংসহ সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ শহরের ছাত্ররা ছাত্রধর্মঘট পালন করে। সাংহাই শহরের শিল্প-শ্রমিক, ব্রিটিশ মালিকানাধীন কাইলান খনি শ্রমিকরা ছাত্র ধর্মঘটের সমর্থনে শ্রমিক ধর্মঘট পালন করেন। এটি ছিলো আধুনিক চীনের ইতিহাসে শ্রমিকদের প্রথম রাজনৈতিক ধর্মঘট।