চীনের হাইড্রোঅ্যাকোস্টিক প্রকৌশলবিদ্যার জনক জনাব ইয়াং শি এয়ের গল্প
১৯৬০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর, তিনি হারবিন সামরিক প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বহুমুখী হাইড্রোঅ্যাকোসটিক প্রকৌশলের গবেষণা বিভাগ চালু করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী পাঠ্যপস্তুক রচনা করেন এবং ‘শব্দ নীতি’ ও ‘পানির নিচে শব্দ প্রচারের নীতি’-সহ কয়েকটি পাঠ্যপস্তুক ও বই প্রকাশ করেন।
১৯৮০ সালের ১৮ মে চীনের প্রথম আইসিবিএম ‘তংফেং ৫’ চিউছুয়ান ক্ষেপণাস্ত্র কেন্দ্র থেকে নিক্ষেপ করা হয় এবং পরিকল্পিতভাবে সমুদ্রে গিয়ে পড়ে। অধ্যাপক ইয়াং ও তাঁর গবেষকদল জাহাজবাহী হাইড্রোঅ্যাকোস্টিক ব্যবস্থার মাধ্যমে, সংশ্লিষ্ট তথ্য সনাক্ত করেন এবং সাফল্যের সঙ্গে ‘তংফেং ৫’-এর অবস্থান চিহ্নিত করেন। তখন থেকে চীন নিজের গবেষণা থেকে সৃষ্ট আইসিবিএম অর্জন করে। ধীরে ধীরে মাথা উঁচু করে বিশ্বের মঞ্চে দাঁড়ায় চীন।
তবে হাইড্রোঅ্যাকোস্টিক ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্দিষ্টভাবে বিশাল সমুদ্রে ‘তংফেং ৫’-এর অবস্থান চিহ্নিত করা অধ্যাপক ইয়াং ও তাঁর গবেষকরা প্রায় ১০ বছর সময় নিয়ে গবেষণা করেন। শুরুর দিকে কেউ জানতেন না, যখন আইসিবিএম সমুদ্রে পড়ে, তখন শব্দ কী ধরনের হবে। তবে, এ কাজ জাতীয় নিরাপত্তার সাথে জড়িত, তাই শূন্য থেকে সংশ্লিষ্ট গবেষণার কাজ শুরু করেন ইয়াং।
৭০ বছর ধরে অধ্যাপক ইয়াংয়ের নেতৃত্বে চীনের হাইড্রোঅ্যাকোসটিক প্রকৌশল গবেষণা শূন্য থেকে বিশ্বের উন্নত মানে দাঁড়ায়। সমুদ্রে খনিজ সম্পদের অনুসন্ধান, জাহাজ নেভিগেশন, সমুদ্রের নিচে সামুদ্রিক সম্পদ উন্নয়ন, এবং সমুদ্রের জলসীমা রক্ষার মতো যে-কোনো ক্ষেত্র হাইড্রোঅ্যাকোসটিক প্রকৌশলের সাথে জড়িত।
দক্ষিণ চীন সাগর চীনের বৃহত্তম সামুদ্রিক এলাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক চ্যানেল। ১৯৯৪ সালের এপ্রিল মাসে চীনে প্রথমবারের মতো হাইড্রোঅ্যাকাস্টিক জরিপ শুরু হয়। এটি চীনের হাইড্রোঅ্যাকাস্টিক বিজ্ঞানের বহুমুখী ফিল্ড জরিপ এবং উপকূলীয় এলাকা থেকে গভীর সমুদ্রের প্রথম যাত্রা। অধ্যাপক ইয়াং দুটি হাইড্রোঅ্যাকাস্টিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা-জাহাজ ও শতাধিক গবেষক নিয়ে এ যাত্রায় অংশ নেন। যখন বিষুবরেখার কাছাকাছি পৌঁছান, জাহাজের ডেকের তাপমাত্রা তখন ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চরম উষ্ণ ও গরম আবহাওয়ায় খাদ্য ও পানির অভাবে ৬০ বছর বয়সের অধ্যাপক ইয়াং জাহাজের ব্যালাস্ট জল সিদ্ধ করে খেয়েছেন। তিনি বলেন, বিজ্ঞান গবেষণার কাজ যেন যুদ্ধের মতো, বিজ্ঞানীদের সৈন্যদের মতো অসাধারণ ইচ্ছাশক্তি ও অধ্যবসায়ের পরিচয় দিতে হয়।