চীনা যুবক-যুবতীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের নাইট ক্লাস জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কারণ
শুরুর দিকে চুয়াং লিং মনে করতেন যে, এমন নাইট ক্লাস শুধু আবাসিক এলাকার বয়স্ক লোকদের জন্য চালু হয়েছে। তিনি একটি ‘ছবি আঁকার ক্লাসে’ যোগ দেন। ক্লাসের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা তাঁর কল্পনার চেয়ে বেশি এবং তাদের গড় বয়স ৩০ বছরের কাছাকাছি; নারীর সংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশ। শিক্ষকের সাথে ছবি আঁকার পর তিনি বুঝতে পারেন এ ক্লাসে সত্যিকারের পড়াশোনার বিষয় রয়েছে। ধীরে ধীরে তিনি খেয়াল করেন যে, ছবি আঁকার ক্লাস থেকে অনেক আঁকার পদ্ধতি শিখেছেন তিনি। যদিও লেখাপড়া ও চর্চার প্রক্রিয়া মাঝে মাঝে কঠিন মনে হয়, তবে এমন দক্ষতা শিখতে পেরে তিনি আরো সুন্দরভাবে ছবি আঁকাতে পারেন, সেটি বেশ মজার ও গর্বের ব্যাপার। তার জীবন এমন ক্লাসের জন্য আরো মজাদার হয়ে উঠেছে।
এ স্মৃতি স্মরণ করে চুয়াং বলেন, সবসময় একই কাজ করতে ভালো লাগে না। তখন কোনো চ্যালেঞ্জ অনুভব করা যায় না, মজাও লাগে না। তবে, যখন একটি কঠিন কাজ বা চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে সাফল্য পায়, তখন খুব আনন্দ পায়।
চীনা মাটির হস্তকর্মশিল্পী ছাই সিন চিয়ে বেইজিংয়ের উপকন্ঠ এলাকা সুংচুয়াংতে একটি কর্মশালা স্থাপন করেছেন। সেখানে নিজের ডিজাইন করা চীনা মাটির পাত্র বা কাপ তৈরি করার পাশাপাশি, চীনা মাটির প্রতি আগ্রহী শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেন তিনি। তবে, সুংচুয়াং এলাকা বেইজিংয়ের সবচেয়ে পূর্বে অবস্থিত। তাই ছাত্রছাত্রীদের জন্য এ কর্মশালায় আসতে অনেক সময় লাগে। নিয়মিত ক্লাস নেওয়া অসম্ভব ব্যাপার। পরে, তিনি ছাওইয়াং এলাকায় নতুন একটি জায়গা ভাড়া করে চীনা মাটির নাইট ক্লাস চালু করেন। প্রথম ক্লাসে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ জনেরও বেশি ছিল। অনেকে প্রায় শূন্য থেকে চীনা মাটির পাত্র তৈরি শেখেন। সেটি শিক্ষক ছাইয়ের জন্য বেশ উত্সাহব্যাঞ্জক ব্যাপার। বস্তুত, এখন বেইজিংয়ের অনেক শপিং মলে চীনা মাটির অনুশীলন দোকান দেখা যায়। প্রতিবার প্রায় শতাধিক ইউয়ান খরচ করে চীনা মাটির শিল্পকর্ম নিজেই তৈরি করতে পারেন লোকেরা। এমন দোকান আর নাইট স্কুলের চীনা মাটি ক্লাসের মধ্যে পার্থক্য কী? এ সম্পর্কে ছাই বলেন, শপিং মলের চীনা মাটির দোকান কম সময়ের মধ্যে একটি শিল্পকর্ম তৈরি করতে হয়, তাই ভোক্তা হিসেবে টাকা দিয়ে অন্যদের সাহায্যে নিজের তৈরি চীনা মাটি শিল্পকর্ম পাওয়া যায়। তবে, নাইট ক্লাসে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিত আর ধারাবাহিক লেখাপড়ার সময় প্রয়োজন। এভাবে তারা নিজেরাই চর্চা করে চীনা মাটির পাত্র তৈরির দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। ধাপে ধাপে নিজের অগ্রগতি অনুভব করা যায়, সেটি বেশ মজাদার ব্যাপার।
মোদ্দাকথা, মানুষের ছোটবেলায় স্কুলে পড়াশোনা করা বাধ্যতামূলক কাজ। অনেকে স্কুলের লেখাপড়া পছন্দ করে না। তবে, যখন বড় হয়ে চাকরি নেয়, তখন অনেকে বুঝতে পারে যে, মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করা সবচেয়ে মজার ও তাত্পর্যপূর্ণ ব্যাপার। এমন লেখাপড়া থেকে মনের আনন্দ অনুভব করা যায়। খুব সম্ভবত, এ কারণে নাইট স্কুল আবার চীনাদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়েছে।