চীনের সংখ্যালঘু জাতির আঞ্চলিক ভাষা রক্ষা কার্যক্রম প্রসঙ্গ
বেইজিং ভাষা ও সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা সংরক্ষণ গবেষণাগারের গবেষক ওয়াংলিনিং ২০০৭ সালে প্রকাশিত ‘চীনেরভাষা’ বইতে লিখেছেন, ২০০০ সালের অগাস্ট মাসে মাঠের জরিপ অনুসারে, মাচিয়াং জেলার লংশান উপজেলার ফুশিং গ্রামের গ্রামবাসী ওয়েনকুওইং-এর বয়স ছিল ৮৭ বছর। তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি মুলাও ভাষা বলতে পারেন ও বোঝেন। ২০১৫ সালে আবার তাঁকে খুঁজে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করেন গবেষকরা, তবে কেউ সফল হননি। বিষয়টি তাদের মনে দাগ কাটে। মুলাও ভাষা জানা লোক আর না-থাকায় সংশ্লিষ্ট জরিপও বন্ধ হয়ে যা। এ ভাষাটি খুব সম্ভবত বিলীন হয়ে গেছে।
আসলে সারা বিশ্বজুড়ে মুলাও ভাষার মতো অনেক ভাষা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ইউনেস্কো ভাষার ভিত্তিতে মানচিত্র প্রকাশ করে। এতে বিশ্বের কিছু কিছু এলাকায় বিপন্ন ভাষাসমূহের চিত্র তুলে ধরে হয়। এ মানচিত্রে বিশ্বের ২৪৭৪ ধরনের বিপন্ন ভাষা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ২৩০ ধরনের ভাষা ১৯৫০ সাল থেকে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে গেছে। ভারতে মোট ১৯৬ ধরনের ভাষা বিপন্ন। এক্ষেত্রে দেশটি বিশ্বে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ১৯২ ধরনের এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৪৭ ধরনের ভাষাকে মানচিত্রে বিলুপ্তপ্রায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
চীনও একটি বহুজাতিক দেশ। তাই এখানে বিভিন্ন জাতির ভাষা, আঞ্চলিক ভাষা ও ভিন্ন অক্ষরের ভাষা রয়েছে। হান-তিব্বতি, আলতাই, দক্ষিণ এশিয়া আর ভারত-ইউরোপ ভাষা বিভাগের ১৩০টিরও বেশি ভাষা রয়েছে চীনে, যা এ দেশকে বিশ্বের অন্যতম ভাষাসমৃদ্ধ দেশে পরিণত করেছে। তবে বিশ্বায়ন ও সমাজের আধুনিকায়নের কারণে কিছু কিছু আঞ্চলিক ভাষা ও সংখ্যালুঘু জাতির ভাষাও এখন বিপন্ন বা বিলুপ্তির মুখে পড়েছে।
একটা দেশের মানুষের জীবনে আঞ্চলিক ভাষার প্রভাব অস্বীকার করার উপায় নেই। গবেষক ওয়াং লি নিং এটা বোঝাতে একটি উদাহরণ দিয়েছেন। চা-য়ের ইংরেজি ‘টি’, যা আসলে চীনের মিননান আঞ্চলিক ভাষা থেকে এসেছে। এখনও চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের সিয়ানমেন ও ছুয়ানচৌ শহরের আঞ্চলিক ভাষায় চা-কে ডাকা হয় ‘টি’। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশ যেমন সিঙ্গাপুর বা মালিয়েশিয়ার খাবারে সাতেই সস (satay sauce) বেশ প্রচলিত। কুয়াংতুং প্রদেশের ছাওচৌ আর শানথৌর আঞ্চলিক ভাষায় ‘চা’-কে ডাকা হয় সাতেই সস!