চীনের ‘মাওতুন’ সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী ছেন ইয়ানের গল্প
ছেন ইয়ানের জন্মস্থান চীনের শাআনসি প্রদেশের চেনআন জেলার একটি পাহাড়াঞ্চলে। সেখানকার অনেক কিশোর-কিশোরী সাহিত্যের ব্যাপারে আগ্রহী ছিল। তখন জেলার শ্রমিক সংস্থা কিশোরদের জন্য বই পড়ার স্থান করে দেয়। শাআনসি প্রদেশ ও স্থানীয় পত্রিকার অনেক লেখক জেলায় এসে কিশোরদের সঙ্গে সাহিত্য শেয়ার করেন। তখন থেকে সাহিত্যের প্রতি অনেক আগ্রহ তৈরি হয় ছেনের এবং তাঁর নিজের লেখার ওপরও এর প্রভাব ছিল প্রকট।
চীনা কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ তৈরিতে কী কী করা উচিত। এ ব্যাপারে লেখক ছেন ইয়ান বলেন, ‘বই পড়া বাচ্চাদের বড় হওয়ার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। যদি কেউ ছোটবেলায় বা যুবকালে কম বই পড়ে, তাহলে বড় হয়ে তাঁর পক্ষে লেখক হওয়া প্রায় অসম্ভব।’ বই পড়া একটি বিস্ময়কর ব্যাপার। একজন লেখকের বই পছন্দ হলে যে-কেউ ১০টি বই পড়তে আগ্রহী হয়। যেমন, শেক্সপিয়ারের বই পড়ার পর তাঁর নাটকসহ বিভিন্ন লেখা নিয়ে তিনি গবেষণা করেন। তাঁর বইয়ে ইতিহাসের কোন কোন দিক উঠে এসেছে, সেসব ইতিহাস সম্পর্কে অন্যান্য লেখক কী বলে গেছেন—ইত্যাদি জানতে তিনি আগ্রহী হন। এভাবে তাঁর বই পড়ার সংখ্যা ও ব্যাপ্তি বেড়েছে। বই পড়া যেন গাছের ট্রাঙ্কের খোঁজ পাওয়ার মতো, যতো বেশি পড়া যাবে তত বেশি শাখা-প্রশাখার দেখা মিলবে।
বর্তমানে চীনা সমাজে মোবাইল ফোনের ব্যাপক প্রচলন আছে। অনেকে স্মার্টফোনে ই-বুক পড়েন। কোনো কোনো শিশু বই পড়তে পছন্দ করে, তবে তাদের বইগুলো ফাস্টফুডের মতো। তাদের পঠিত বইয়ের মধ্যে সেরা বইয়ের সংখ্যা যথেষ্ঠ নয়, যা তাদের কল্পনাশক্তিকে সমৃদ্ধ করতে পারে না। কিশোর-কিশোরীরা কয়েক শ বা কয়েক হাজার বছর ধরে প্রচলিত ক্লাসিক সাহিত্যগুলো পড়তে পারে বলে মনে করেন ছেন।
লেখক ছেন নিজের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে বলেন, তিনি যুবকালে অনেক শ্রেষ্ঠ সাহিত্য পড়েছেন। তবে, তখন বইয়ের অনেক অংশ বুঝতে পারেননি। বয়স হওয়ার সাথে সাথে জীবন সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতা বেড়েছে, তখন সেসেব বইয়ের অনেক দার্শনিক সূত্র ও অর্থ নিতে বুঝতে পেরেছেন। সে এক চমত্কার অনুভূতি। ১৯ বছর বয়সে প্রথমবার রুশ লেখক দস্তয়েভস্কির উপন্যাস ‘অপরাধ ও শাস্তি’ আর ‘ব্রাদার্স কারামাজভ’ পড়েছেন ছেন ইয়ান। তবে, উপন্যাসের অর্থ বুঝতে পারেননি। ৪০ বছর বয়সে তিনি আরেকবার উপন্যাসগুলো পড়েন। তখন অনেক কথার অর্থ ও তাত্পর্য বুঝতে পারেন।