মেড ইন চায়না: পর্ব-৯: চীনামাটি
১৩৬৮ থেকে ১৬৪৪ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী মিং রাজবংশ এবং ১৬৪৪ থেকে ১৯১১ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিং রাজবংশের আমল ছিল চীনামাটির পাত্র তৈরির স্বর্ণযুগ । এই যুগে তৈরী চীনামাটির পাত্রের সংখ্যা আর গুণগত মান ছিল অন্য সব সময়ের চেয়ে বেশি।
চীনের দক্ষিণাঞ্চলের চিন তে চেন শহরকে বলা হয় "চীনামাটির রাজধানী"। এটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কয়েকশো বছর স্থায়ী হওয়া মিং ও ছিং রাজবংশের আমলে চীনামাটির পাত্রের জগতে এ শহরই ছিল অগ্রপথিক। এখন পর্যন্ত চীনের সবচেয়ে দামি চীনামাটির পাত্রগুলো তৈরি হয় চিনতে চেন শহরেই।
এবার চীনামাটির বাসনকোসন তৈরির কারিগরি দিক নিয়ে জানা যাক।
চীনামাটির কাঁচামাল হলো কাওলিন নামের একটি প্রাকৃতিক খনিজযুক্ত পদার্থ। এই পদার্থটিকে নির্দিষ্ট আকৃতি দেওয়ার পর বড় আকারের চুল্লিতে ১২০০ ডিগ্রি থেকে ১৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পুড়িয়ে তৈরি করা হয় চীনামাটির নানা পণ্য । কাওলিন সংগ্রহ করার পর সেটাকে পরিষ্কার ও চূর্ণ করার পর তাপ দেওয়ার আগে ও পরে রয়েছে বেশ কয়েকটি ধাপ। প্রাথমিক আকৃতি দেওয়ার পর প্রথম ধাপে একবার প্রচণ্ড তাপ দেওয়া হয়। পরে নকশা চূড়ান্ত হওয়ার পর দ্বিতীয় ধাপেও তাপ দেওয়া হয়।
চীনের চিয়াংশি প্রদেশের চিনতেচেন শহরের কাওলিন গ্রামের একটি টিলা থেকে এ মাটি সংগ্রহ করা হয় বলেই মূলত ওই খনিজের আরেক নাম কাওলিন। এই কাওলিনে আছে ৪৬ শতাংশ বালু, ৪০ শতাংশ অ্যালুমিনা ও ১৪ শতাংশ পানি।
উচ্চ তাপমাত্রায় পোড়ানোর ফলে চীনামাটির ভেতরে মালাইট নামের একটি খনিজ গঠিত হয় এবং মাটির ভেতর কাচিভবন নামের একটি প্রক্রিয়া ঘটে। এতে করে মৃৎশিল্পে ব্যবহৃত অন্যান্য উপাদানের তুলনায় চীনামাটি বেশি শক্ত, ভারবাহী ও স্বচ্ছ হয়ে থাকে। চীনামাটির একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এটি অভেদ্য। এর ভেতর দিয়ে পানি প্রবেশ করতে পারে না বলে এটি হাজার বছর ধরে টিকে থাকে।