চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৩৬
ঢাকায় মধ্য-শরৎ উৎসব উপলক্ষ্যে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
এদিকে, চীনা সংগীত, নাচ ও মার্শাল আর্ট পরিবেশনার মাধ্যমে চীনের ঐতিহ্যবাহী মধ্য-শরৎ উৎসব উদযাপিত হয়েছে বাংলাদেশে।
ঢাকায় এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ারের দ্বিতীয় দিনে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উদযাপিত হয়।
ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট ও চাইনিজ এন্টারপ্রাইজেস এসোসিয়েশন বাংলাদেশ চীন নাচ, গান ও শরীরচর্চা পরিবেশন করে।
সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাটি শুরু হয় ‘উজ্জ্বল চাঁদ ও ফোটা ফুল সমেত এক চমৎকার রাত্রি’ যন্ত্রসংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে। এরপর একে একে চীনা গান, মার্শাল আর্ট ও নাইফ টেকনিক পরিবেশন করেন কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও অন্যান্য পারফর্মাররা।
অনুষ্ঠানের পুরো সময়ই দর্শকরা তুমুল করতালির মাধ্যমে পারফর্মারদের উৎসাহ জোগান।
প্রতিবেদন: মাহমুদ হাশিম/শান্তা মারিয়া।
২. লোককাহিনীতে মধ্য-শরৎ উৎসব
চীনের অন্যতম প্রধান সামাজিক উৎসব, মধ্য-শরৎ উৎসব হয়ে থাকে চীনের চান্দ্র পঞ্জিকা বা লুনার ক্যালেন্ডার অনুযায়ী অষ্টম চান্দ্র মাসের ১৫তম দিনে বা ভরা পূর্ণিমার রাতে। মধ্য-শরৎ উৎসবকে ঘিরে অনেকগুলো লোকজ গল্প রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত গল্পটি হলো চন্দ্রদেবী ছ্যাং ই কে ঘিরে।
অনেক অনেক বছর আগে আকাশে উঠেছিল দশটি সূর্য। সেই দশ সূর্যের তাপে মানুষের জীবন হয়ে পড়লো অতিষ্ঠ। তখন মানুষকে দুর্দশা থেকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেন বীর তীরন্দাজ হোও ই। তিনি তীর ধনুক দিয়ে নয়টি সূর্যকে কুপোকাত করলেন। পৃথিবীর জন্য একটি সূর্যই যথেষ্ট বলে রয়ে গেল একটিমাত্র সূর্য।
হোওইর এই বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে দেবরানী মা মতান্তরে দেবতারা হোওইকে দিলেন এক বোতল অমৃত। এই অমৃত খেলে তিনি অমর হবেন এবং দেবতায় পরিণত হয়ে অমৃতলোকে চলে যাবেন। হোওই তার স্ত্রী ছ্যাং ইকে খুব বেশি ভালোবাসতেন। অমর হওয়ার চেয়ে স্ত্রীর সঙ্গে মর্ত্যলোকে বাস করাটাই তার বেশি কাম্য ছিল। তাই তিনি বোতলটি ঘরে এনে রেখে দিলেন।
এদিকে, ফাং মাং নামে হোওইর এক লোভী শিষ্য ছিল। একদিন হোওই যখন বাইরে গেছেন তখন ফাং মাং সেই অমৃত চুরি করে খাওয়ার চেষ্টা করে। ফাং মাং-এর মতো খারাপ লোক যেন অমর হতে না পারে তাই ছ্যাং ই দ্রুত অমৃত পান করে ফেলেন। তার শরীর হালকা হয়ে যেতে থাকে এবং তিনি চাঁদে পৌছে যান। তিনি পরিণত হন চাঁদের দেবীতে। বিরহকাতর হোওই তাকে স্মরণ করে চাঁদের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করেন এবং চাঁদের প্রতি নানা রকম নৈবদ্য উৎসর্গ করেন। প্রচলিত রয়েছে যে, মধ্য-শরৎ উৎসবের রাতে পূর্ণিমার চাঁদে ছ্যাং ইর ছায়া দেখা যায়।
আরেকটি গল্পে রয়েছে, অরণ্যে খরগোশের কাছে দেবতারা অতিথি হলে, অতিথি সৎকারের জন্য অন্য কোন খাদ্য না থাকায় আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজেকেই উৎসর্গ করে খরগোশ। তার এই আত্মত্যাগে মুগ্ধ হয়ে দেবতারা তাকে জেড পাথরের পবিত্র প্রাণীতে পরিণত করে চাঁদে স্থান দেন।