দেহঘড়ি পর্ব-০১৭
তবে ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসাব্যবস্থা বা টিসিএমে সামগ্রিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিষণ্নতার চিকিৎসা দেওয়া হয়, যা অত্যন্ত কার্যকর হয়। হাজার হাজার বছর ধরে টিসিএম দর্শন মানসিক স্বাস্থ্য ও শারীরিক স্বাস্থ্যের মধ্যে মৌলিক যোগসূত্রকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। আবেগ ও চিন্তা অঙ্গ-ব্যবস্থার সঠিক কার্যকারিতার যেমন অবিচ্ছেদ্য অংশ; তেমনি অবিচ্ছেদ্য অংশ সুস্থতারও। অঙ্গগুলোর মধ্যকার ভারসাম্যহীনতা মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আবার মানসিক সমস্যা অঙ্গগুলোর মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে। পশ্চিমা চিকিৎসাব্যবস্থায় বিষণ্নতার ভিন্ন ভিন্ন উপসর্গ যেমন হজমের সমস্যা, মাথাব্যথা, বিরক্তি ও ঘুমের সমস্যার চিকিৎসার জন্য আলাদা বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হয়, তবে টিসিএম চিকিৎসা-ব্যবস্থায় এ সমস্যাগুলোকে একটি বিশেষ প্যাটার্নের অংশ হিসাবে দেখা হয় এবং সে প্যাটার্নের সামগ্রিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
টিসিএমে বিশ্বাস করা হয়, মূল জীবনীশক্তি বা ‘ছি’র স্থবিরতা বা বাধার কারণে বিষণ্নতা সৃষ্টি হয়। এটি সাধারণত লিভার, প্লীহা, হার্ট বা কিডনির ‘ছি’ স্থবিরতার সঙ্গে সম্পর্কিত। লিভারের ‘ছি’ স্থবিরতা হতাশার তীব্র অনুভূতি, পেটে ব্যথা ও হজমের সমস্যা, অম্বল বা বুক শক্ত হওয়া এবং মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। হার্ট বা প্লীহাতে ‘ছি’র ঘাটতি উদ্বেগ, ঘুমের সমস্যা ও ক্ষুধামন্দা তৈরি করে। উদ্বেগসহ দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্নতা সাধারণত ঠান্ডা-শক্তি বা ‘ইয়িন’র ঘাটতির সঙ্গে সম্পর্কিত, যা বিরক্তি, অস্থিরতা, নিদ্রাহীনতা ও পিঠে ব্যথার কারণ। একজন টিসিএম অনুশীলনকারী এসব উপসর্গ বিশ্লেষণ করে আকুপাংচার ও ভেষজ দিয়ে উপযুক্ত প্যাটার্নের চিকিৎসা দেন। আকুপাংচার মানসিক চাপ উপশম করে এবং নিদ্রাহীনতা দূর করতে সাহায্য করে।
স্বল্প বিষণ্নতায় আক্রান্ত রোগীদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, দশটি আকুপাংচার চিকিৎসা নিয়েছেন এমন রোগীদের মধ্যে যারা এ চিকিৎসা নেননি তাদের তুলনায় এ রোগ কমেছে। অন্য এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিষণ্নতা ও উদ্বেগ-সম্পর্কিত ব্যাধিগুলোর চিকিত্সায় ব্যবহৃত অ্যামিট্রিপটাইলাইন ওষুধ নোরপাইনফ্রাইনের স্তরগুলোর ওপর যেরকম ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, ঠিক একই রকম প্রভাব ফেলে ইলেক্ট্রো-আকুপাংচার চিকিত্সা।