বাংলা

দেহঘড়ি পর্ব-০১৭

CMGPublished: 2023-05-07 17:12:12
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং টিসিএম ভেষজের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা ‘ভেষজের গুণ’।

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

বিষণ্নতার চিকিৎসায় টিসিএম

বিষণ্নতা একটি ব্যাপক বিস্তৃত তবে গুরুতর রোগ। এ রোগ আক্রান্ত ব্যক্তির অনুভূতি, চিন্তাভাবনা ও কর্মকাণ্ডের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিষণ্নতা দুঃখের অনুভূতি সৃষ্টি করে। কোনও ব্যক্তি একসময় যেটা উপভোগ করতেন, তেমন কিছুর প্রতি আগ্রহ কমে যায় বিষণ্নতায় আক্রান্ত হলে। এছাড়া এ রোগ বিভিন্ন ধরনের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে এবং কর্মক্ষেত্রে ও ঘরে কাজ করার ক্ষমতা নষ্ট করতে পারে।

বিষণ্নতার লক্ষণ

অনেক আক্রান্ত ব্যক্তি তাদের বিষণ্নতার অনুভূতিগুলো লুকিয়ে রাখেন বা অস্বীকার করেন। বিষণ্নতার লক্ষণ ও উপসর্গগুলো চিনতে হবে, যাতে আপনি নিজে বা আপনার কাছের কেউ আক্রান্ত হলে আপনি সাহায্য পেতে পারেন। বিষণ্ণতার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে ওজন বা ক্ষুধায় পরিবর্তন, ঘুমের অভ্যাসে পরিবর্তন আসা, ড্রাগ বা অ্যালকোহলে আসক্তি তৈরি হওয়া, মনোযোগে অসুবিধা হওয়া, কাজকর্মে আগ্রহের অভাব বোধ করা, ক্লান্তি বোধ করা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, যৌনশক্তি কমে যাওয়া, পিঠে ব্যথা, মাথাব্যথা বা হজমে সমস্যা দেখা দেওয়া।

বিষণ্নতার চিকিৎসা

পাশ্চাত্য চিকিৎসায় বিষণ্নতাকে মূলত শরীরে রাসায়নিকের ভারসাম্যহীনতা হিসাবে দেখা হয়, যা প্রধানত মস্তিষ্কের হরমোন বা নিউরোট্রান্সমিটারকে প্রভাবিত করে। একটি অত্যন্ত আবেগপূর্ণ কোনও ঘটনা বা কোনও কঠিন পরিস্থিতি থেকে বিষণ্নতা জেগে উঠতে পারে। এরপর রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা নেতিবাচক আবেগ ও বিশৃঙ্খল চিন্তা সৃষ্টি করতে পারে। বেশিরভাগ ধরণের বিষণ্নতার জন্য প্রচলিত চিকিৎসা হলো সাইকোথেরাপি, যা টক থেরাপি নামেও পরিচিত, এবং অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি ওষুধের সংমিশ্রণ।

তবে ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসাব্যবস্থা বা টিসিএমে সামগ্রিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিষণ্নতার চিকিৎসা দেওয়া হয়, যা অত্যন্ত কার্যকর হয়। হাজার হাজার বছর ধরে টিসিএম দর্শন মানসিক স্বাস্থ্য ও শারীরিক স্বাস্থ্যের মধ্যে মৌলিক যোগসূত্রকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। আবেগ ও চিন্তা অঙ্গ-ব্যবস্থার সঠিক কার্যকারিতার যেমন অবিচ্ছেদ্য অংশ; তেমনি অবিচ্ছেদ্য অংশ সুস্থতারও। অঙ্গগুলোর মধ্যকার ভারসাম্যহীনতা মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আবার মানসিক সমস্যা অঙ্গগুলোর মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে। পশ্চিমা চিকিৎসাব্যবস্থায় বিষণ্নতার ভিন্ন ভিন্ন উপসর্গ যেমন হজমের সমস্যা, মাথাব্যথা, বিরক্তি ও ঘুমের সমস্যার চিকিৎসার জন্য আলাদা বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হয়, তবে টিসিএম চিকিৎসা-ব্যবস্থায় এ সমস্যাগুলোকে একটি বিশেষ প্যাটার্নের অংশ হিসাবে দেখা হয় এবং সে প্যাটার্নের সামগ্রিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

টিসিএমে বিশ্বাস করা হয়, মূল জীবনীশক্তি বা ‘ছি’র স্থবিরতা বা বাধার কারণে বিষণ্নতা সৃষ্টি হয়। এটি সাধারণত লিভার, প্লীহা, হার্ট বা কিডনির ‘ছি’ স্থবিরতার সঙ্গে সম্পর্কিত। লিভারের ‘ছি’ স্থবিরতা হতাশার তীব্র অনুভূতি, পেটে ব্যথা ও হজমের সমস্যা, অম্বল বা বুক শক্ত হওয়া এবং মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। হার্ট বা প্লীহাতে ‘ছি’র ঘাটতি উদ্বেগ, ঘুমের সমস্যা ও ক্ষুধামন্দা তৈরি করে। উদ্বেগসহ দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্নতা সাধারণত ঠান্ডা-শক্তি বা ‘ইয়িন’র ঘাটতির সঙ্গে সম্পর্কিত, যা বিরক্তি, অস্থিরতা, নিদ্রাহীনতা ও পিঠে ব্যথার কারণ। একজন টিসিএম অনুশীলনকারী এসব উপসর্গ বিশ্লেষণ করে আকুপাংচার ও ভেষজ দিয়ে উপযুক্ত প্যাটার্নের চিকিৎসা দেন। আকুপাংচার মানসিক চাপ উপশম করে এবং নিদ্রাহীনতা দূর করতে সাহায্য করে।

স্বল্প বিষণ্নতায় আক্রান্ত রোগীদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, দশটি আকুপাংচার চিকিৎসা নিয়েছেন এমন রোগীদের মধ্যে যারা এ চিকিৎসা নেননি তাদের তুলনায় এ রোগ কমেছে। অন্য এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিষণ্নতা ও উদ্বেগ-সম্পর্কিত ব্যাধিগুলোর চিকিত্সায় ব্যবহৃত অ্যামিট্রিপটাইলাইন ওষুধ নোরপাইনফ্রাইনের স্তরগুলোর ওপর যেরকম ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, ঠিক একই রকম প্রভাব ফেলে ইলেক্ট্রো-আকুপাংচার চিকিত্সা।

এটি সুবিদিত যে, বিভিন্ন ভেষজের সংমিশ্রণে তৈরি একটি টিসিএম ফরমুলেশন একক ভেষজের ফরমুলেশনের চেয়ে বেশি কার্যকর। খাই-সিন-সানের এর মতো অসংখ্য টিসিএম ভেষজ ফরমুলেশন রয়েছে, যা সাধারণত বিষণ্নতার চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত হয়। ভেষজ ফরমুলেশন ও ডোজ উপসর্গের ভিত্তিতে একেক রোগীর জন্য একেক রকম হয়।

#চিকিৎসার_খোঁজ

গ্লোবাল ডক্টর ক্লিনিক

গ্লোবাল ডক্টর ক্লিনিক চীন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে কার্যক্রম পরিচালনাকারী একটি হাসপাতাল চেইন। এ দেশগুলোর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত জোট ‘গ্লোবাল ডক্টরস অ্যালায়েন্স’ এ হাসপাতালগুলো চালায়। জোটের লক্ষ্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর রোগীদের নির্বিঘ্ন ও মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা প্রদান করা। এখনও পর্যন্ত এ জোটের মালিকানায় চলছে ১৫টি হাসপাতালের একটি নেটওয়ার্ক। চীনে এ নেটওয়ার্কের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৯ সালে এবং হাসপাতালগুলোর ৬টিই চীনের বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। স্থানগুলো হলো নানচিং প্রদেশের পশ্চিম নানচিং, কুয়াংতুং প্রদেশের তুংকুয়ান, সিচুয়ান প্রদেশের ছেংতু, ছংছিং নগরীর হিলটন বিজনেস টাওয়ার, নানচিং প্রদেশের চিয়ানইয়ে জেলা এবং সি’য়ানের চিনইয়ে জেলা।

শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত জোটের প্রতিটি হাসপাতাল শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের পরিসম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে৷ এখানে সুস্থতার পাশাপাশি রোগীদের আরামের প্রতিও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসা ও রোগ-নির্ণয় সুবিধা ও সরঞ্জামসমৃদ্ধ এসব হাসপাতালে কাজ করেন অভিজ্ঞ বহুভাষিক চিকিৎসক ও অন্যন্য চিকিৎসাকর্মীরা। এ জোটের গ্লোবাল একাডেমি অব ইমার্জেন্সি মেডিসিন আন্তর্জাতিক মান ও সার্টিফিকেশনসহ পেশাদার স্বাস্থ্যসেবা এবং বিশ্বমানের প্রাক-হাসপাতাল চিকিৎসা সহায়তা প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষাসেবা দেয়।

#ভেষজের গুণ

সামুদ্রিক শৈবাল

স্বাস্থ্যগত উপকারিতা এবং সম্পূর্ক খাদ্য হিসাবে এশিয়ায় বহু বছর ধরে ব্যবহৃহ হয়ে আসছে সামুদ্রিক শৈবাল বা সিউয়িড। তবে একটি সুপারফুড হওয়ার এবং এর চাষ সহজ হওয়ার কারণে সামুদ্রিক শৈবালের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে আজকাল।

সামুদ্রিক শৈবালকে চীনা ভাষায় বলা হয় ‘হাই চাও’। এটি সাধারণত লবণাক্ত পানিতে জন্মায়। তিন ধরনের সামুদ্রিক শৈবাল আছে - বাদামী, লাল ও সবুজ। বাদামী সামুদ্রিক শৈবালের মধ্যে রয়েছে কম্বু, যা জাপানে ব্যাপকভাবে খাওয়া হয়, লাল জাতের মধ্যে রয়েছে নরি, যা সুশির আবরণ হিসাবে ব্যবহৃত হয় এবং ডালসে। সবুজ সবচেয়ে সাধারণ ধরনের সিউয়িড।

ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসাব্যবস্থায় দেহের মূল ঠান্ডাশক্তি বা ‘ইয়িন’ এবং মূল তাপশক্তি বা ‘ইয়াং’র ভারসাম্য বজায় রাখতে সামুদ্রিক শৈবাল ব্যবহৃত হয়। ‘ইয়িন’ শরীরের তরল, তেল, আর্দ্রতা, শীতলতা ও স্থিরতা রক্ষা করে। অন্যদিকে ‘ইয়াং’ তাপ, শুষ্কতা ও উষ্ণতার সঙ্গে সম্পর্কিত। কারো বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘ইয়িন’র ঘাটতি হওয়া সাধারণ ব্যাপার। যখন শরীরে ‘ইয়িন’র ঘাটতি থাকে, তখন তাপ বৃদ্ধি পায়। এর কারণ হলো ‘ইয়িন’ কমে গেলে ‘ইয়াং’ শক্তির ভারসাম্য বজায় থাকে না। এই ভারসাম্য রক্ষার উপযুক্ত খাবার হলো সামুদ্রিক শৈবাল।

‘ইয়িন’ ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি সামুদ্রিক শৈবাল "কঠিনতাকে কোমল করে" এবং কফ পাতলা করে। এর ফলে লিপোমাস, সিস্ট, পিণ্ড ও চর্বি দূর করতে সাহায্য করে সামুদ্রিক শৈবাল। গলগণ্ডে থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যাওয়া উপশমে এটি ব্যাপকভাব ব্যবহৃত হয়।

সামুদ্রিক শৈবালে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ; যেমন ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন বি, পটাসিয়াম ও ফলিক অ্যাসিড। এছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে আয়োডিন থাকে। আয়োডিন থাইরয়েডের বৃদ্ধি, বিপাক ও রোগপ্রতিরোধ শক্তির জন্য সাহায়ক।

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn