'চকচকে লাল তারা'-China Radio International
'ইন দ্য মুড ফর লাভ'-এ সঙ্গীত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ওয়াং কার ওয়াই’র অন্যান্য চলচ্চিত্রগুলোয় সাধারণত ব্যতিক্রমহীনভাবে চীনা সঙ্গীতের ব্যবহারই বেশি দেখা যায়। কিন্তু এই চলচ্চিত্রে অন্যগুলোর তুলনায় সঙ্গীতের বাছাই একেবারে অনন্য। তিনি এতে মূলত ন্যাট কিং কোলের স্প্যানিশ ভাষায় গাওয়া কিছু গান ও কিছু কালজয়ী চীনা সঙ্গীত ব্যবহার করেছেন। গানগুলো কিংবা জাপানি সংগীতশিল্পী শিগেরু উমেবায়াসির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, দুইয়েরই মূল বিষয়বস্তু হারানো কোনোকিছুর জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষা। স্মৃতিকাতরতার উপর ভিত্তি করে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোতে পূর্বের দিনগুলোর আনন্দ নির্দেশ করতে প্রায়ই নৃত্যের ব্যবহার দেখা যায়। কিন্তু এই সিনেমায় নেই কোনো নৃত্যের দৃশ্য। তবুও এর একটি সিকোয়েন্সকে ছন্দময়, দ্রুত সম্পাদনার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে নৃত্যের সারাংশ।
ওয়াং কার-ওয়াই এর চলচ্চিত্রগুলো বিখ্যাত তাদের সজীবতার জন্য, যা তিনি শিখেছেন তার গুরু প্যাট্রিক টামের কাছ থেকে। আলোচ্য সিনেমায় '৬০-র দশকের রাস্তা, অট্টালিকাগুলোর নির্মাণ একদম নিখুঁত। রাস্তাগুলো আধুনিক যুগের হাইওয়ের মতো নয়, সেগুলোর স্থানে স্থানে রয়েছে ফাটল। উয়াং তার শৈশব কাটান '৬০ ও '৭০ এর দশকের হংকংয়ে। তবে চলচ্চিত্রটির মূল চরিত্রগুলো হংকংয়ের হলেও তিনি নিজে শাংহাইয়ের মানুষ। তার শৈশবের দিনগুলোর সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেগুলো একজন ব্যক্তি হিসেবে তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, সেসবেরই বহিঃপ্রকাশ 'ইন দ্য মুড ফর লাভ'। কিন্তু তার দর্শকরা হংকং হোক কিংবা অন্য কোনো স্থানের হোক, তারা তো আর সেই সময়কার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে অবগত নন। তাহলে ওং কীসের মাধ্যমে তার শৈশব সম্পর্কে আমাদের পরিচিত করতে পারেন?
উত্তর হচ্ছে- পুনরাবৃত্তি ঘটানোর মাধ্যমে। পুরো দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটানো হয়েছে মাঝেমধ্যে এবং একই সিকোয়েন্স ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে কয়েকবার করে দেখানো হয়েছে। যেমন- সু এবং চৌ একই ছায়াতলে বারবার দেখা করেছেন। এমন করার মূল লক্ষ্য দুটি- ১. তাদের সম্পর্কের কোন মুহূর্তে তারা রয়েছে দর্শকদের কাছে তা নির্দেশ করা, ২. রাস্তা ও অট্টালিকাগুলোর সাথে দর্শকদের পরিচয় করানো। পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে রাস্তা, নুডলসের দোকান, সিড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, ২০৪৬ এর করিডর- সব দর্শকের মনে জায়গা করে নেয়। গানগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটে, খাবারগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটে এবং ওং কার-ওয়াইয়ের মনের ভেতরকার পৃথিবী দর্শকের মনের ভেতরকার পৃথিবীতে রূপ নেয়।