আইল্যান্ড কিপার-China Radio International
প্রতিদিন সকালে এই দম্পতি প্রথম যে কাজ করতেন তা হলো- দ্বীপে চীনের পঞ্চতারকা খচিত লাল পতাকা উত্তোলন করা।
কেউ তাদেরকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার কাজ দেয় নি। তবে ওয়াং চি ছাই মনে করেন, এই দ্বীপে অন্য স্থানের তুলনায় জাতীয় পতাকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলে বিশ্বকে জানানো হয় যে, এটি চীনের মাটি। কেউ আমাদের দমন করতে পারবে না।
একদিন টাইফুন দ্বীপে আঘাত হানে। জাতীয় পতাকা রক্ষা করতে ওয়াং চি ছাই দুর্ঘটনাক্রমে ১৭টি সিঁড়ির ওপর থেকে মাটিতে পড়ে যান। তার পাঁজরের দু’টি হাড় ভেঙে যায়। তবে তিনি হাত দিয়ে শক্ত করে জাতীয় পতাকা জড়িয়ে ধরে রাখেন। তিনি বলেন, বহু বছর ধরে আমি দ্বীপে অবস্থান করেছি। খাই শান দ্বীপ আমার বাড়ি। মারা গেলে আমাকে এ দ্বীপে কবর দিও।
খাই শান দ্বীপ হলো পাথরের পাহাড় দিয়ে ঘেরা। সেখানে পানি নেই, বিদ্যুত নেই, খাদ্যশস্যও নেই। স্থানীয়রা বলে, সেখানে একদিন থাকাও অনেক কষ্টকর। তবে ওয়াং চি ছাই এবং তার স্ত্রী সেখান থেকে চলে আসেন নি। পানি না থাকলে তারা জলের ভাণ্ডারে সংগ্রহীত বৃষ্টির পানি পান করতেন। বিদ্যুত না থাকলে তারা রাতে মোমবাতি জ্বালাতেন। খাদ্যশস্যের অভাব মেটাতে তারা দ্বীপে চাষাবাদ শুরু করেন ও মাছ ধরেন।
দ্বীপে তারা কষ্টকর জীবনযাপন করতেন। ডাঙ্গায় তাদের মেয়েরা পিতামাতা ছাড়া কষ্টকর জীবন কাটাতেন। গ্রীষ্মকালের এক রাতে মশার কয়েল থেকে মশারিতে আগুন লেগে যায়। এতে তাদের তিনটি মেয়ের শরীর পুড়ে যায়। এ খবর পেয়ে ওয়াং চি ছাই দারুণ মর্মাহত হন। তবে তিনি নিজের দায়িত্ব ছেড়ে দেন নি। তিনি বলেন, আমার কাছে দ্বীপ তদারক করা রাষ্ট্রকে রক্ষা করার মতো গুরুত্বপূর্ণ। এই দ্বীপ পাহারা দেওয়া নিজের বাড়ি সুরক্ষার মতো জরুরি।
কেউ তাদেরকে সেই দ্বীপে থাকার নির্দেশ দেন নি। তবে তারা একবারও সেখান থেকে চলে যাওয়ার কথা জানান নি। ৩০ বছরের মধ্যে অনেক সুযোগ ও প্রলোভন এসেছিলো। চোরাচালানকারীরা ওয়াং চি ছাইয়ের সঙ্গে মুনাফা ভাগাভাগি করার প্রস্তাব দেন; কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ডাঙ্গার অর্থনীতি উন্নত হচ্ছে। সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের ফলে আশেপাশের জনগণ ধনী হয়ে উঠছেন; তবে তারা সারা জীবন দ্বীপেই রয়ে যান।