বাংলা

আইল্যান্ড কিপার-China Radio International

criPublished: 2021-07-07 15:02:04
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

সম্প্রতি ‘Island Keeper’ মুভিটি গোটা চীনে প্রদর্শিত হয়েছে। এ চলচ্চিত্রটি জনগণের আদর্শ হিসেবে পরিচিত কমরেড ওয়াং চি ছাই’র কাহিনী অবলম্বনে তৈরি হয়। এতে ওয়াং চি ছাই এবং তার স্ত্রী ওয়াং শি হুয়া টানা ৩২ বছর ধরে খাই শান দ্বীপ পাহারা দেওয়ার সত্যিকারের গল্প তুলে ধরে। এতে স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসা, বাবা ও সন্তানের ভালোবাসা এবং কমরেডস ইন-আর্মসের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশিত হয়।

মৃত্যুর আগে ওয়াং চি ছাই চিয়াংসু প্রদেশের কুয়ান ইউন জেলার খাই শান দ্বীপের মিলিশিয়া পোস্টের প্রধান ছিলেন। ১৯৮৬ সালের ১৪ জুলাই তিনি স্ত্রীকে না জানিয়ে খাই শান দ্বীপ তদারক করার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। রাতে প্রবল বাতাস দ্বীপের ওপর আঘাত হানতে শুরু করে। দ্বীপটিতে নামার আগে চার দফায় মোট ১০জনেরও বেশি মিলিশিয়া দ্বীপ তদারকির কাজ করেছিল। তবে সর্বোচ্চ ১৩ দিনের বেশি সেখানে কেউ থাকতে পারেন নি।

৩০ অগাস্ট ওয়াং শি হুয়া খাইশান দ্বীপে নামেন এবং তার ‘নিখোঁজ’ স্বামীকে খুঁজে বের করেন। অবশেষে তিনি সেখানে আসেন এবং পুরো শরীরে দুর্গন্ধযুক্ত স্বামীকে খুঁজে পান। পুরো শরীরে দুর্গন্ধযুক্ত স্বামীকে খুঁজে পান। স্বামীকে দেখে স্ত্রীর চোখের পানি চলে আসে। তিনি স্বামীকে বলেন, আমার সঙ্গে বাসায় চলো। অন্যরা দ্বীপের তদারক করে না, আমরাও করবো না।

মূল ভূখণ্ড থেকে খাই শান দ্বীপের দূরত্ব ১২ নটিক্যাল মাইল। দ্বীপটি হলো মাতৃভূমির পূর্ব সামুদ্রিক দরজা। দ্বীপটির আয়তন দুটি ফুটবল মাঠের সমান। যুদ্ধের সময় এ দ্বীপ সমুদ্র ফাঁড়ি ও কৌশলগত ফ্রন্ট হিসেবে কাজ করে। তাই এটি অবশ্যই তদারক করতে হয়। ওয়াং চি ছাই স্ত্রীকে বলেন, ‘তুমি চলে যাও, আমি একা এখানে থাকতে চাই।’

এক মাস পর স্ত্রী ওয়াং শি হুয়া শিক্ষকের কাজ ছেড়ে দেন এবং মেয়েকে শাশুড়ির দায়িত্বে তুলে দেন। তিনি লাগেজ নিয়ে আবারও দ্বীপে চলে যান। তারপর ওয়াং চি ছাই জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দ্বীপটি তদারক করেন এবং স্ত্রী তার দেখাশোনা করেন। ৩২ বছরে একটি জলের ভাণ্ডার, তিনটি কুকুর, চারটি নেভিগেশন আলো, বাতাসের কারণে দশ-বারোটি আঁকাবাঁকা গাছ এবং দু’শতাধিক পুরানো জাতীয় পতাকা ছিল তাদের জীবনের সঙ্গী।

প্রতিদিন সকালে এই দম্পতি প্রথম যে কাজ করতেন তা হলো- দ্বীপে চীনের পঞ্চতারকা খচিত লাল পতাকা উত্তোলন করা।

কেউ তাদেরকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার কাজ দেয় নি। তবে ওয়াং চি ছাই মনে করেন, এই দ্বীপে অন্য স্থানের তুলনায় জাতীয় পতাকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলে বিশ্বকে জানানো হয় যে, এটি চীনের মাটি। কেউ আমাদের দমন করতে পারবে না।

একদিন টাইফুন দ্বীপে আঘাত হানে। জাতীয় পতাকা রক্ষা করতে ওয়াং চি ছাই দুর্ঘটনাক্রমে ১৭টি সিঁড়ির ওপর থেকে মাটিতে পড়ে যান। তার পাঁজরের দু’টি হাড় ভেঙে যায়। তবে তিনি হাত দিয়ে শক্ত করে জাতীয় পতাকা জড়িয়ে ধরে রাখেন। তিনি বলেন, বহু বছর ধরে আমি দ্বীপে অবস্থান করেছি। খাই শান দ্বীপ আমার বাড়ি। মারা গেলে আমাকে এ দ্বীপে কবর দিও।

খাই শান দ্বীপ হলো পাথরের পাহাড় দিয়ে ঘেরা। সেখানে পানি নেই, বিদ্যুত নেই, খাদ্যশস্যও নেই। স্থানীয়রা বলে, সেখানে একদিন থাকাও অনেক কষ্টকর। তবে ওয়াং চি ছাই এবং তার স্ত্রী সেখান থেকে চলে আসেন নি। পানি না থাকলে তারা জলের ভাণ্ডারে সংগ্রহীত বৃষ্টির পানি পান করতেন। বিদ্যুত না থাকলে তারা রাতে মোমবাতি জ্বালাতেন। খাদ্যশস্যের অভাব মেটাতে তারা দ্বীপে চাষাবাদ শুরু করেন ও মাছ ধরেন।

দ্বীপে তারা কষ্টকর জীবনযাপন করতেন। ডাঙ্গায় তাদের মেয়েরা পিতামাতা ছাড়া কষ্টকর জীবন কাটাতেন। গ্রীষ্মকালের এক রাতে মশার কয়েল থেকে মশারিতে আগুন লেগে যায়। এতে তাদের তিনটি মেয়ের শরীর পুড়ে যায়। এ খবর পেয়ে ওয়াং চি ছাই দারুণ মর্মাহত হন। তবে তিনি নিজের দায়িত্ব ছেড়ে দেন নি। তিনি বলেন, আমার কাছে দ্বীপ তদারক করা রাষ্ট্রকে রক্ষা করার মতো গুরুত্বপূর্ণ। এই দ্বীপ পাহারা দেওয়া নিজের বাড়ি সুরক্ষার মতো জরুরি।

কেউ তাদেরকে সেই দ্বীপে থাকার নির্দেশ দেন নি। তবে তারা একবারও সেখান থেকে চলে যাওয়ার কথা জানান নি। ৩০ বছরের মধ্যে অনেক সুযোগ ও প্রলোভন এসেছিলো। চোরাচালানকারীরা ওয়াং চি ছাইয়ের সঙ্গে মুনাফা ভাগাভাগি করার প্রস্তাব দেন; কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ডাঙ্গার অর্থনীতি উন্নত হচ্ছে। সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের ফলে আশেপাশের জনগণ ধনী হয়ে উঠছেন; তবে তারা সারা জীবন দ্বীপেই রয়ে যান।

বছরের পর বছর সময় চলে যায়। দ্বীপ তদারক করার এই সাময়িক কাজ স্থায়ী দায়িত্বে পরিণত হয়।

২০১৮ সালের ২৭ জুলাই ওয়াং চি ছাই খাইশান দ্বীপের সিঁড়িতে মারা যান। মৃত্যুর পর তাকে ‘জাতীয় আউটস্ট্যান্ডিং কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যের’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। ২০১৯ সালে তাকে ‘জনগণের আদর্শ’- জাতীয় উপাধি দেওয়া হয়।

পরে সেই দ্বীপে তার স্ত্রীসহ অনেক সেনা মোতায়েন করা হয়। ৪২ বছর বয়সী ইয়েন বিং হচ্ছেন তৃতীয় দফায় মিলিশিয়া সেনাদের একজন। তিনি বলেন, ওয়াং চি ছাইয়ের দ্বীপ রক্ষার কাহিনী আমাকে মুগ্ধ করেছে। তার কাজ এগিয়ে নিতে আমি আমার নাম তালিকাভুক্ত করেছি। দ্বীপে বাস করার সময় আমিও গভীরভাবে ওয়াং চি ছাইয়ের একাকীত্ব ও নিঃসঙ্গতা অনুভব করেছি। দায়িত্বানুভূতিতে অবিচল থাকার কারণে তারা দীর্ঘ ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দ্বীপ রক্ষা করতে পেরেছিলেন।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn