মহাপ্রাচীরের গাইড চাং সিয়াও ইয়েন
প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত, ৭ থেকে ৮টি পর্যটক দল নিয়ে, তাকে মহাপ্রাচীর ঘুরে দেখতে হয় এবং সারা বছর ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে তার সময় কাটে। নিজের ব্যস্ত কর্মজীবন সম্পর্কে চাং বলেন, ‘এটি আমার জন্য আনন্দের ব্যাপার। প্রতিবার নতুন পর্যটকদের সাথে দেখা হয়। এ অভিজ্ঞতা বেশ মজার।’
বহু বছর ধরে গাইড চাং সিয়াও ইয়ান মনোযোগ দিয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি মনে করেন, যদি শুধু মহাপ্রাচীরকে সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা হয়, তবে তা পর্যটকদের সঠিক তথ্য দেবে না। কারণ, মহাপ্রাচীর ইতিহাস, সংস্কৃতি, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত। তাই, ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এর পরিচয় তুলে ধরা জরুরি।
মহাপ্রাচীরের ইতিহাস নিয়ে বিস্তারিত গবেষণার পর চাং খেয়াল করেন যে, চিয়াইয়ুকুয়ান মহাপ্রাচীর জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে ও বিভিন্ন জাতির সংমিশ্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে। যখন তিনি কোনো মজার ইতিহাস বা গল্প সম্পর্কে অবগত হন, সেটি লিখে রাখতেন। সেগুলো তিনি পর্যটকদের সামনে তুলে ধরতেন। ধীরে ধীরে তাঁর নোটবুকে ২ লাখেরও বেশি অক্ষর সংযুক্ত হয়। অন্য গাইডদের তুলনায় তার পরিবেশিত তথ্য-উপাত্ত বরাবরই বেশি সমৃদ্ধ ও আকর্ষণীয়। তাই, তিনি গাইডের বিশেষজ্ঞের মতো বিশেষ মর্যাদা পেয়েছেন। যখন গুরুত্বপূর্ণ অতিথি এ মহাপ্রাচীর ঘুরে দেখতে আসেন, তখন গাইড চাং সিয়াও ইয়ানের ডাক পড়ে।
গত ২০ বছরে গাইড চাং সিয়াও ইয়ান মোট ৩ লাখেরও বেশি পর্যটককে সেবা দিয়েছেন। ২০১৬ সালের শেষ দিকে চিয়াইয়ুকুয়ান মহাপ্রাচীরের ইতিহাস ভালো করে জানার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট গবেষণা একাডেমিতে যোগ দেন এবং মহাপ্রাচীরের সাথে জড়িত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সংরক্ষণ ও গবেষণার কাজে অংশ নেন।
টানা ২০ বছরের গবেষণা ও নিজের নোটবুকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে গাইড চাং নিজের বই রচনা করেছেন। এর সঙ্গে সঙ্গে ৩০টিরও বেশি থিসিস লিখেছেন এবং প্রাদেশিক পর্যায়ের গবেষণা প্রকল্প প্রস্তাব করেছেন। ২০২২ সালের শুরুতে তিনি মহাপ্রাচীরের সাথে জড়িত ৯০টি সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার বেছে নিয়ে, বিশেষ প্রদর্শনীতে প্রাচীনকালে বিভিন্ন জাতির লোকদের মধ্যে বিনিময়ের গল্প তুলে ধরেন।
অনেক পর্যটকের জন্য চিয়াইয়ুকুয়ান মহাপ্রাচীর শুধু একটি দর্শনীয় স্থান বা ল্যান্ডমার্ক, তবে ইতিহাসে এ মহাপ্রাচীর রেশমপথের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল। এটি চীনাদের সাথে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জাতির বিনিময় ও আদানপ্রদানের স্বাক্ষী।
গাইড চাং সিয়াও ইয়ানের মাধ্যমে বহু লোক মহাপ্রাচীরের ইতিহাস ও গল্প সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। সবাই এ তথ্যের আলোকে মহাপ্রাচীর সংরক্ষণে নিজ নিজ ভুমিকা পালন করবেন বলে আশা করা যায়