চীনে বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর যেভাবে দর্শকদের চাহিদা মেটাতে পারে
গত কয়েক বছর ধরে চীনের বিভিন্ন এলাকায় জাদুঘর পরিদর্শন পর্যটকদের ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছে। আগে মনে করা হতো যে, জাদুঘর মূলত বিশেষজ্ঞ বা গবেষকদের জন্য। আর আজকাল চীনে প্রাথমিক স্কুল থেকে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে জাদুঘর ঘুরে বেড়ানোর ক্লাস বা বিশেষ কার্যক্রম চালু আছে। বলা যায়, নিয়মিতভাবে বিভিন্ন জাদুঘরে যাওয়া নতুন প্রজন্মের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। চীন বিশাল একটি দেশ এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি বা সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার রয়েছে। তাই, এই দেশে ছোটবড় জাদুঘরের সংখ্যা অনেক। যেমন, চীনের চিয়াংসু প্রদেশের নানচিং শহরে ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৭টি জাদুঘর রয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘর নিয়ে কথা বলবো।
চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরগুলো সাধারণত পেশাদার মেজরের সাথে জড়িত। তাই, এ ধরনের যে কোনো জাদুঘর নির্দিষ্ট ও বিশেষ ধরনের জ্ঞানের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরে শুধু একটি বিষয়সংশ্লিষ্ট প্রদর্শনী দেখা যায়। যেমন, নানচিং আঙুলের ছাপ জাদুঘর চীনের একমাত্র আঙুলের ছাপবিষয়ক বিশেষ জাদুঘর। এখানে ‘আঙুলের ছাপ বিদ্যা’ নামক বিখ্যাত বই সংরক্ষিত আছে। এটি চীনের প্রথম সম্পূর্ণ ও ধারাবাহিক আঙুলের ছাপ গবেষণা শাস্ত্র বা গ্রন্থ। চীনের কৃষিসভ্যতা জাদুঘর দেশের প্রথম কৃষির ইতিহাস ও সংস্কৃতিসংশ্লিষ্ট জাদুঘর। এখানে সংশ্লিষ্ট গবেষণার ফলাফল তুলে ধরার ব্যবস্থা আছে।
নানচিং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে একটি ঐতিহ্যিক ও সুন্দর প্রাচীন স্থাপত্য বেশ আকর্ষণীয়। এটি চীনা কৃষিসভ্যতা জাদুঘর। চীনা স্থাপত্যবিদ ইয়াং থিং পাও ১৯৫২ সালে এ জাদুঘর ডিজাইন করেন। জাদুঘরের সহকারী উপমহাপরিচালক লু ইয়ং বলেন, এ পুরনো স্থাপত্য একটি শিল্পকর্ম। এ জাদুঘরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহ রয়েছে। যেমন, চীনে তৈরি প্রথম পেনিসিলিন এখানে সংরক্ষিত আছে। ১৯৪৪ সালে চীনে প্রথম ব্যাচের পেনিসিলিন উত্পাদিত হয়। সেই ওষুধ জাপানি আগ্রাসন-বিরোধী লড়াইয়ে অংশগ্রহণকারী চীনা সৈন্যদের ব্যবহারের জন্য পাঠানো হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিশ্বে মাত্র ৭টি দেশ পেনিসিলিন উত্পাদন করতে পারতো। এটি ওষুধ সৈন্যদের জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এ পেনিসিলিন স্ট্রেনের মালিক গত শতাব্দীর ৮০-র দশকে নানচিং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অণুজীববিজ্ঞানী ফান ছিং শেং। তাঁর মৃত্যুর পর এ পেনিসিলিনের স্ট্রেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরে হস্তান্তর করা হয়।