চীনে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষাসনদের গুরুত্ব
পিতামাতাদের সাথে দূরত্ব দূর করার উপায়
চীনের নগরায়নের প্রক্রিয়ায়, গ্রামাঞ্চলের অনেক পিতামাতা চাকরির জন্য বড় প্রদেশ বা শহরে কাজ করতে আসেন। ফলে তাদের ছোট বাচ্চারা জন্মস্থানে থাকে, নানা-নানী বা দাদা-দাদীর কাছে। দীর্ঘকাল ধরে এসব বাচ্চা পিতামাতার সাথে না থাকায় তাদের মধ্যে মধুর সম্পর্ক গড়ে ওঠে না; এক ধরনের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। যখন তারা একটু বড় হয়, তখন তাদের কেউ কেউ মানসিক সমস্যায়ও ভুগতে থাকে। এ সমস্যা মোকাবিলায় কুইচৌ প্রদেশে একটি বিশেষ হটলাইন চালু হয়েছে। এটি হচ্ছে ১২৩৫৫। ছাত্রছাত্রীরা এ ফোন নম্বরে ফোন করে পেশাদার মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শকের কাছ থেকে সাহায্য ও পরামর্শ পেতে পারে। ১৮ বছর বয়সের মেয়ে লিনলিন তার বাবা-মার সাথে দীর্ঘকাল ধরে বসবাস করে না। নিজের ছোটবেলার গল্প স্মরণ করে লিনলিন বলে, “আমার বাবা-মা কখনও আমার সাথে থাকতেন না। এক বছরের মধ্যে কেবল একবার তাদের সাথে আমার দেখা হতো। অপরিচিত কেউ হলে সমস্যা ছিল না। কিন্তু তারা যেহেতু আমার পিতামাতা, তাই আমার তাদের সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলা কষ্টকর হতো। আমার মনের সাথে তাদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল।”
মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শক চাং হেং রং ফোন থেকে লিনলিনের উদ্বেগ ও বিরক্ত অনুভব করেন। তিনি মনে করেন, বস্তুত লিনলিন বাবা-মাকে গুরুত্ব দেয়, তবে তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া তার জন্য সহজ ব্যাপার নয়। তিনি লিনলিনকে সান্ত্বনা দেন এবং পরামর্শ দেন যে, নিয়মিত বাবা-মায়ের সাথে আড্ডা দিতে হবে এবং মনের কথা তাদের সাথে শেয়ার করতে হবে। এভাবে দূরত্ব কমে আসতে পারে। তিনি বলেন, যখন বাবা-মার সাথে ভালো করে আড্ডা দেবে, তখন তা একটি নোটবুকে টুকে রাখবে।
পরামর্শক চাংয়ের সহায়তায় লিন লিনের সাথে বাবা-মার সাথে সম্পর্ক খানিকটা ঘনিষ্ঠ হয় এবং তাদের সাথে কথাবার্তার মাত্রাও বাড়তে থাকে।
বস্তুত চীনের কুইচৌ প্রদেশসহ আরও অনেক জায়গায় অনেক গ্রামাঞ্চলের বাচ্চারা একই সমস্যার সম্মুখীন হয়। তাদের বাবা-মা অনেক দূরের শহর বা জেলায় চাকরি করে, তাই সন্তানের সাথে পিতামাতার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। দাদা-দাদীরা বাচ্চাদের খাওয়া-থাকার যত্ন নিতে পারেন, তবে তাদের মানসিক চাহিদা মেটানো বা মেজাজ মোকাবিলা করা মুশকিল। ফলে অনেক বাচ্চার মানসিক অবস্থা দুর্বল হয়, চরিত্র হয় অন্তর্মুখী। এটা শুরুর দিকে কেবল বাবা-মার সাথে আড্ডার সময় দেখা যায়, তবে বড় হওয়ার পর অন্যদের সাথেও সহাবস্থান বা যোগাযোগ করা তাদের জন্য কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তাই বাবা-মার সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলে অন্যদের সাথে যোগাযোগের সমস্যাও দূর হয়ে যায়।
