পিতামাতার বকাঝকা বাচ্চাদের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ
পিতামাতার সঙ্গে সন্তানের সুসম্পর্কের আরেকটি পূর্বশর্ত আছে, আর সেটি হল: মনোযোগ দিয়ে বাচ্চার কথা শুনতে হবে। যদি বাচ্চারা ছোট বা বড় যে-কোনো বিষয়ে বাবা-মার সাথে তথ্য বিনিময় করে, তাহলে তাদের বড় হওয়ার পথে তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
বস্তুত, পিতামাতার বকাঝকা আসলে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। চীনের সুবিখ্যাত লেখক চু জি ছিং ‘বকাঝকা’ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন, জীবনে সবসময় তত্ত্ব বা নীতিকথা বিরক্তিকর। কেবল বকাঝকা ও আড্ডা জীবনে আনন্দ বয়ে আনতে পারে। মনোবিজ্ঞান গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, যদি একজনের কথায় ৯০ শতাংশ আড্ডার আমেজ থাকে, তাহলে তিনি সহজে জীবনের সুখ অনুভব করতে পারেন। যদি আড্ডার আমেজ ৫০ শতাংশের চেয়ে কম হয়, তবে সুখের অনুভূতি সহজে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তাই বাচ্চাদের সাথে সবসময় আড্ডা করা পিতামাতা ও বাচ্চার সাথে সম্পর্কের উন্নয়নে সহায়ক এবং পরস্পরের সুখ বাড়িয়ে দিতে পারে।
মাস্যাচুসেট্স ইন্সটিটিউ অফ টেকনোলজি (এমআইটি)-র একটি জরিপ থেকে জানা গেছে, বাচ্চা যত বেশি বাবা-মায়ের সাথে কথাবার্তা বলে, তাদের মস্তিষ্কের ভাষাসংশ্লিষ্ট অংশের কর্মতত্পরতা তত শক্তিশালী হয়। বাচ্চাদের সাথে বেশি আড্ডা দিলে, কথাবার্তা বললে, তার নতুন শব্দ জানার গতিও বাড়ে। এতে তাদের মৌখিক ভাষা ও শ্রবণক্ষমতার উন্নয়নে সহায়ক। এতে তাদের আইকিউও বৃদ্ধি পায়। বাচ্চাদের গণিত শেখার দক্ষতা, ইচ্ছাশক্তি, আত্মশৃঙ্খলা ও সহমর্মিতা তাদের ছোটবেলায় শোনা শব্দমালার সাথেও জড়িত। যদি আড্ডায় মজার গল্প ও দৃশ্য বর্ণনা করা হয়, তাহলে তাদের কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতা বাড়বে।
আড্ডাও এক ধরনের শিক্ষা। এ শিক্ষা বাচ্চারা সহজে গ্রহণ করতে পারে। বাচ্চাদের অনুভূতি ও আবেগ যথন পিতামাতার কাছ থেকে যথাযথ প্রতিক্রিয়া পায়, তাদের প্রশ্নের উত্তর যখন তারা পিতামাতার কাছ থেকে পায়, তখন তাদের মানসিক চাপ কমে। বাচ্চা সবসময় হাসিখুশি থাকলে তার বহিঃপ্রকাশও দেখা যায়, যা পিতামাতার জন্য আনন্দদায়ক। এতে বাচ্চাদের মেজাজ সুন্দর ও স্থিতিশীল হয়, চরিত্র হয় উন্মুক্ত।