চীনের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক-শিক্ষার্থীর গ্রামাঞ্চলে কাজ করার গল্প
যখন প্রথমবারের মতো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রাঙ্গণের শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা হয়, তখন স্থানীয় গ্রামবাসীরা অনেক অবাহ হয়েছিলেন। কারণ, তাঁরা কখনও বড় শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাষাবাদ করতে দেখেননি। চীনের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ ও পরিবেশ একাডেমির ২০১৯ সালের মাস্টার্স শিক্ষার্থী চু কাও সুয়ান ছুচৌ’র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রাঙ্গণ সম্পর্কে বলেন, “আমাদের গবেষণা পুরোপুরি ছিল মুরগীর বিষ্টা নিয়ে।” এ গ্রামে আসার আগে তিনি কখনও ভাবেননি যে, তাঁর দৈনিক গবেষণাকাজের সাথে মুরগীর বিষ্টা জড়িত থাকবে।
মুরগি লালনপালন ছুচৌ জেলার গুরুত্বপূর্ণ একটি শিল্প। তবে, এর ফলে সৃষ্ট দূষিত পানি ও বিষ্টা আশেপাশের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। স্থানীয় মাটি ও ভূগর্ভস্থ পানির উৎস দূষিত হওয়ার ঝুঁকিও আছে। তাই মুরগি লালনপালনে সর্বপ্রথমে বিষ্টা-দূষণ সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। শিক্ষার্থী চু কাও সুয়ানের মেজর স্থানীয় কৃষির আবর্জনা পুনঃব্যবহার করা এবং মুরগির বিষ্টা থেকে সৃষ্ট দূষণ হ্রাস করা। এভাবে পরিবেশ সংরক্ষণের সাথে সাথে স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়নও নিশ্চিত করা যায়।
শুরুর দিকে শিক্ষার্থী চু বইয়ের জ্ঞান অনুসারে, বিভিন্ন ধরনের নির্ভুল সরঞ্জাম ব্যবহার করে গবেষণাকাজ করতে থাকেন। তবে, একসময় তিনি খেয়াল করেন যে, বইয়ের সফল পরীক্ষার নমুনা মুরগি লালনপালনকারী কৃষকদের জন্য উপযোগী নয়। তাঁরা কোনো হাইটেক নির্ভুল সরঞ্জাম কিনতে পারেন না। ছুচৌ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রাঙ্গণের গবেষণাকাজের জন্য একটি ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
পরে শিক্ষার্থী চু আশেপাশের আনচাই জেলার বৃহত্তম সার শোধনাগারে গিয়ে সংশ্লিষ্ট গবেষণাকাজ করেন। মুরগির বিষ্টায় সালফাইডের পরিমাণ বেশি। তাই, বিভিন্ন ধরনের জৈব সারের মধ্যে এর দুর্গন্ধ সবচেয়ে বেশি। এ অভিজ্ঞতা স্মরণ করে চু বলেন, “আমার আশেপাশে অ্যামোনিয়া গ্যাসের তীব্র গন্ধ। মুরগির বিষ্টা থেকে তৈরি সারের মধ্য দিয়ে হাঁটাহাটির সময় আমার নাক, চোখ আর শ্বাসনালী দুর্গন্ধ দ্বারা আক্রান্ত হয়। সেসময় আমার শরীরে সবসময় দুর্গন্ধ অনুভব করতাম।” তবে তিনি এ কথাও জানালেন যে, এভাবে কাজ না-করলে তাঁর পক্ষে বাস্তব পরিসংখ্যান পাওয়া সম্ভব হতো না। আর পরিসংখ্যান বা তথ্য-উপাত্ত ছাড়া সংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধান করা সম্ভব না। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে গবেষণার পর তিনি কার্যকরভাবে মুরগির বিষ্টা থেকে তৈরি সারের দূষণ কমিয়ে আনার পদ্ধতি খুঁজে পান। তাঁর গবেষণার ফল চীনের জাতীয় পেটেন্ট পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।