‘ক্লিফ গ্রামের’ ব্যাপক পরিবর্তন ও স্থানীয় শিক্ষার উন্নয়ন-China Radio International
ক্লিফ গ্রামের ৫০ বছর বয়সী ই জাতির বাসিন্দা মো সে জি কু স্মৃতিচারণ করে বলেন, এ গ্রামের বাচ্চারা অনেক দেরিতে স্কুলে ভর্তি হতো। কারণ, লতার সিঁড়ি শুধু বড়দের জন্য। বাচ্চাদের জন্য এই সিঁড়ি নয়। বাচ্চারা স্কুলে যেতে না-পেরে শুধু মাটিতে খেলাধুলা করে সময় কাটাতো। তার ছোটবেলা কেটেছে ক্লিফ গ্রামে। তিনি পাহাড়ের বাইরে যেতে আগ্রহী ছিলেন। তবে, মাধ্যমিক স্কুল থেকে স্নাতক হওয়ার পর পরিবারের দরিদ্রতার কারণে অধিক পড়াশোনা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, অতীতে এ গ্রামের বাচ্চাদের জন্য উচ্চশিক্ষা গ্রহণ অনেক কঠিন ব্যাপার ছিল। ১৯৯৩ সালে তিনি আথুলের গ্রামের অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে দয়িত্ব পালন করতে শুরু করেন। কারণ, বাইরে থেকে আসা শিক্ষকরা কম সময়ের মধ্যেই চলে যেতেন। এ অবস্থায় মাধ্যমিক স্কুল পাস করা মো সে জি কু সবচেয়ে উপযোগী প্রার্থীতে পরিণত হন। পরের ১১ বছর তিনি ক্লিফ গ্রামের বাচ্চাদের চীনা ভাষা ও গণিতসহ বিভিন্ন বিষয়ে পড়িয়েছেন এবং অনেক ছাত্রছাত্রীর শিক্ষাবঞ্চিত থাকার অভিজ্ঞতার স্বাক্ষী হয়েছেন।
স্কুলে যাওয়ার রাস্তা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর অন্যতম। গ্রাম থেকে সবচেয়ে কাছের মাধ্যমিক স্কুলে যেতে প্রায় ৫০ কিলোমিটার হাঁটতে হতো। গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা ভোর ৪টার দিকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাঁটতে শুরু করতো। রাস্তায় ক্ষুধা লাগলে শুধু ভুট্টা ও আলু খেতো এবং সন্ধ্যা ৬টায় স্কুলে পৌঁছাতে সক্ষম হতো।
শিক্ষক মো সে জি কু’র অভিজ্ঞতা অনুসারে, বিপজ্জনক রাস্তা, দরিদ্র পিতামাতার শিক্ষার প্রতি অনীহা ইত্যাদি কারণে বাচ্চারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকতো। ক্লিফ গ্রামে শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ ছিল না মোটেই।
বু ছিয়ে ছোটবেলাতেই অর্থের মূল্য বুঝতে শেখে। কারণ, তার পরিবারের বার্ষিক আয় ছিল মাত্র ২০০০ ইউয়ান, যা ভুট্টা বিক্রি করে মিলত। আর তার নিজের বার্ষিক পড়াশোনার খরচ ছিল প্রায় ৬০০ ইউয়ান, যা পরিবারের মোট আয়ের তিন ভাগের এক ভাগ। তার পরে আরও তিন জন বোন জন্ম নেয়। তাই পরিবারের আর্থিক বোঝা আরও বাড়ে। তাদের পিতা মো সে উ হার বয়স মাত্র ৪৮ বছর তখন। কিন্তু জীবনযুদ্ধে ক্লান্ত তাকে বেশি বয়স্ক মনে হতো। ছোটবেলায় তিনি ১৩ বছর পর্যন্ত পাহাড়ের বাইরে যেতে পারেননি। স্কুলে যাওয়ার সুযোগও হয়নি তার। তাই তিনি ম্যান্ডারিন ভাষা পড়তে পারেন না। ২৮ বছর বয়সের সময় তিনি চাকরি নেওয়া জন্য উত্তর চীনের ছাংছুন শহরে যান। তবে ভাষাগত সমস্যার কারণে মাত্র এক মাস পর ক্লিফ গ্রামে ফিরে আসতে বাধ্য হন। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, তাঁর বাচ্চাদের লেখাপড়া শেখাতে তিনি সম্ভাব্য সবকিছু করবেন।