‘ক্লিফ গ্রামের’ ব্যাপক পরিবর্তন ও স্থানীয় শিক্ষার উন্নয়ন-China Radio International
২০০৮ সালে ক্লিফ গ্রামের বাসিন্দা এ দে লাই ক্য জেলা থেকে একটি টেলিভিশন গ্রামে নিয়ে আসেন। এটি ছিল ক্লিফ গ্রামের প্রথম টেলিভিশন। গ্রামের সব বাসিন্দা তার বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে টেলিভিশন দেখত। বাইরের বিশ্বের দৃশ্য প্রথমবারের মতো তাদের সামনে তুলে ধরে এই টেলিভিশন। এ দে লাই ক্য মাধ্যমিক স্কুলের পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত থেকে অবশেষে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং তারপর নিজের জন্মস্থানে ফিরে আসেন।
ই জাতির লেখক আক্যচিউশে বলেন, দারিদ্র্যতায় অভ্যস্ত হওয়া দুঃখজনক ব্যাপার। ৩৬ বছর আগে ক্লিফ গ্রামের একজন কলেজ পাস করেন। উনি জেলাশহরে বাড়ি করেন। লেখক আক্যচিউশে তার সাথে কথা বলেন। লেখক তাকে বলেন, অতীতে গ্রামের পিতামাতারা বাচ্চাদের পড়াশোনায় মনোযোগ দেননি। তবে, যখন উনি কলেজ পাস করেন ও জেলাশহরে চাকরি পান এবং প্রতিদিন মাংস ও ভাত খাওয়ার সুযোগ পান, তখন স্থানীয় গ্রামবাসীরা শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পারেন।
এ সম্পর্কে স্থানীয় জিরমো উপজেলার সিপিসি’র সম্পাদক আজিআনিউ বলেন, অতীতে লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত বাচ্চাদের স্কুলে ফিরেয়ে নিতে অনেক বোঝাতে হতো। তবে, এখন পরিস্থিতি বদলেছে। এখন প্রতিটি পরিবারের বাচ্চারা পড়াশোনা করে। যেসব বাচ্চা পরীক্ষায় ভালো করে, সেসব বাচ্চার পিতামাতা গ্রামের শ্রেষ্ঠ অতিথি হিসেবে বিভিন্ন দাওয়াতে আমন্ত্রণ পান। এখন গ্রামের বাবামারা বাচ্চাদের পড়াশোনায় অনেক উত্সাহ দেন।
বুছিয়ে’র বাবা মোসেউহা বাচ্চারা শিক্ষিত হয়েছে বলে গর্বিত। যদিও উনি অশিক্ষিত মানুষ, তবে তিনি জানেন তাঁর ছেলে পড়াশোনায় ভালো। ২০১৪ সালে ক্লিফ গ্রামের পবর্তের পাদদেশে লের প্রাথমিক স্কুলঘর নির্মিত হয় এবং ২০১৬ সালে লোহার সিঁড়িও তৈরি করা হয়। ২০২০ সালে ক্লিফ গ্রামের ৮৪টি দরিদ্র পরিবার জেলার নতুন বাড়িঘরে স্থানান্তরিত হয়। এখন চাওচুয়ে জেলায় প্রাথমিক স্কুলে ভর্তির হার ৯৯.৮৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে; মাধ্যমিক স্কুলেও ভর্তির হার ৯৯.৮৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ৩০২২২ জন দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়ে স্কুলে ভর্তি হয়েছে। ছেলে বুছিয়ে তাদের একজন। তার লক্ষ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগ থেকে স্নাতক হওয়া। লক্ষ্য অর্জনের জন্য সে প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৫টায় জেগে ওঠে ও মধ্যরাতে ঘুমায়। সে বলল, ‘শহরের বাচ্চারা আমার চেয়ে ভালো পড়াশোনার পরিবেশ পায়। তারা অনেক পরিশ্রমও করে। তাই আমাকে আরও বেশি চেষ্টা করেতে হবে।’
১৭ বছর বয়সের মেয়ে মোসেলাজুও লের প্রাথমিক স্কুল থেকে পাস করে চাওচুয়ে মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হয়েছে। সে ক্লাসের সবচেয়ে বয়স্ক মেয়ে। ছোটবেলায় তাকে লতার সিঁড়ি বেয়ে স্কুলে যেতে হতো। তখন থেকেই সে পরিশ্রম করে আসছে। সে বড় হয়ে একজন চীনা ভাষার শিক্ষিকা হতে চায়, জন্মস্থানের বাচ্চাদের শিক্ষায় নিজের অবদান রাখতে চায়।
বর্তমানে ক্লিফ গ্রামের বাসিন্দারা সবাই সুখী জীবন কাটাতে পারছেন। পিতারা পাহাড়ে গোলমরিচ ও জলপাই চাষ করেন, মাতারা জেলায় পড়াশোনা করা বাচ্চাদের যত্ন নেন। তাদের কাছে পরিবারের সবার একসঙ্গে থাকা ও মাস গেলে বেতন পাওয়া সবচেয়ে বড় সুখের বিষয়।