‘ক্লিফ গ্রামের’ ব্যাপক পরিবর্তন ও স্থানীয় শিক্ষার উন্নয়ন-China Radio International
বন্ধুরা, চীনের দারিদ্র্যবিমোচন কার্যক্রম ২০২০ সালের শেষ দিকে শেষ হয়েছে। মানে, ২০২০ সাল শেষ হবার আগেই চীন সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। গত বছর আমাদের অনুষ্ঠানে দারিদ্র্যবিমোচন কার্যক্রমের আওতায় থাকা চরম দরিদ্র এলাকাগুলোর কিছু তথ্য তুলে ধরেছিলাম। এর মধ্যে সিছুয়ান প্রদেশের ‘ক্লিফ গ্রাম’-ও ছিল। দুর্বল অবকাঠামো ও বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে এ গ্রামের বাসিন্দাদের জীবন ছিল কঠিন। তারা পাহাড়ের শৃঙ্গে বসবাস করতেন। বাইরে যেতে হলে তাদেরকে লতা দিয়ে তৈরি বড় সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে হতো। আজকের অনুষ্ঠানে এ ‘ক্লিফ গ্রামের’ ব্যাপক পরিবর্তন ও স্থানীয় শিক্ষার উন্নয়ন সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরবো।
অতীতে ক্লিফ গ্রামের বাচ্চাদের মধ্যে খুব কমই শিক্ষার আলো পেতো, আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ পেতো। কারণ, গ্রামবাসীর কাছে পশপালনের চেয়ে লেখাপড়ার গুরুত্ব কম ছিল। তা ছাড়া, স্কুলে যাওয়ার পথ অনেক জটিল ও বিপজ্জনক ছিল। গ্রামের যেসব বাচ্চা প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সুযোগ পেতো, তাদের বেশিরভাগই আবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি অতিক্রম করতে পারতো না। কিন্তু এখন অবস্থা বদলেছে। গ্রামের পিতামাতারা সবাই এখন বুঝতে পেরেছেন যে, পড়াশোনা হবে দারিদ্র্যবিমোচনের সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।
২০২০ সালের জুন মাসে ক্লিফ গ্রামের দরিদ্র পরিবারগুলোকে নতুন জায়গায়, নতুন বাড়িঘরে স্থানান্তর করা হয়। নতুন জায়গায় নতুন প্রাথমিক স্কুলভবন নির্মিত হয়েছে। স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৫২০ জনেরও বেশি। ক্লিফ গ্রামের বাচ্চারা স্কুলে ভর্তি হতো স্বাভাবিক বয়সের চেয়ে বেশি বয়সে। কারণ, পাহাড় থেকে লতার সিঁড়ি বেয়ে নেমে স্কুলে যাওয়া কম বয়সী বাচ্চাদের জন্য প্রায় অসম্ভব। তাই তারা একটু বেশি বয়সে স্কুলে যাওয়া শুরু করতো। যেমন, বুছিয়ে ১১ বছর বয়স থেকে প্রাথমিক স্কুলে যাওয়া শুরু করে। তখন প্রতি সপ্তাহে একবার সে বাড়ি থেকে স্কুলে যেতো। প্রতিবার বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার সময় তার পিতা দড়ি দিয়ে তার কোমর বাঁধতেন, যেন সে লতার সিঁড়ি থেকে নিচে পড়ে না যায়। ছোট বাচ্চা হলেও, তাকে চাল ও আচার বহন করে ৭ কিলোমিটার পথ হাঁটতে হতো। স্কুলে যাওয়ার পথে তাকে ঠাণ্ডা নদীর পানি ও তুষার অতিক্রম করতে হতো এবং স্কুলে পৌঁছার পর সারাদিন তার পা ঠাণ্ডাই থাকতো। প্রথম দুই বছর স্কুলে তার সহপাঠির সংখ্যা ছিল মাত্র ৭/৮ জন। তবে পঞ্চম শ্রেণীতে সংখ্যা কমে দাঁড়ায় মাত্র ২/৩ জনে। এদের মধ্য থেকে মাধ্যমিক স্কুলে মাত্র সে নিজে একা যেতে পেরেছে।