উত্তর মেরুর রাতের প্রহরী লি বিন
মেরুতে মানুষের অন্বেষণ কাজ চালানোর জন্য নতুন অ্যালেসুন্ড নামের একটি ছোট জেলা খুব বিখ্যাত। এ জেলা পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত এবং উত্তর মেরুতে গবেষণার কেন্দ্রও বটে। এখানে অবস্থিত হুয়াং হ্য স্টেশন হলো চীনের মেরু গবেষণাকেন্দ্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্তরের একটি। এ বছরের শীতকাল শুরু হয়েছে এবং এখানে সূর্যোদয় নেই। দীর্ঘ রাতে অন্ধকারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন হুয়াং হ্য গবেষণাকেন্দ্রের কর্মী, উপ-গবেষক লি বিন। আরোরা বা মেরুপ্রভা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে স্পেস ফিজিক্স গবেষণায় নীরবে অবদান রাখছেন তিনি।
৭৯ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে অবস্থিত নতুন অ্যালেসুন্ড নরওয়ের স্পিটসবার্গেন দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপ এবং মানবজাতির সবচেয়ে উত্তরের বসতি। প্রতি বছরের এপ্রিল মাসের শেষ দিক থেকে আগস্ট মাসের শেষ দিক পর্যন্ত মানুষ চরম সূর্য দেখতে আসেন এখানে। তবে বাকি সময় স্থানীয়দেরকে ১২০ দিনের অন্ধকার সহ্য করতে হয়।
কয়লা খনি অনুসন্ধান করতে প্রথমে এ জায়গাটিতে আসে মানুষ এবং অনেক অন্বেষণকারী এখানে জড়ো হন। তারা এখান থেকে ১ হাজার ২শ’ কিলোমিটার দূরে উত্তর মেরুতে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। ১৯২৬ সালে নরওয়ের অনুসন্ধানকারী রোনান্ড আমন্ডসেন বন্ধুর সঙ্গে আকাশযান নিয়ে উত্তর মেরু অতিক্রম করেন এবং তিনিই ইতিহাসের প্রথম মানুষ, যিনি সর্বদক্ষিণ ও উত্তর মেরুতে পৌঁছেছেন। এর আগে এক বছর অর্থাৎ ১৯২৫ সালে চীন স্পিটসবার্গেন দ্বীপপুঞ্জ চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং এ চুক্তি অনুযায়ী উত্তর মেরুর নির্দিষ্ট এলাকায় আসা-যাওয়ার অধিকার অর্জন করে। চীন সেখানে সমানভাবে গবেষণা, মত্স্য, শিকার, খনিসহ উত্পাদন ও ব্যবসা করতে পারে। তবে তখন দুর্বল একটি দেশ হিসেবে চীনের তেমন অর্থ ছিল না।
এর ৮০ বছর পর চীন নতুন অ্যালেসুন্ডে এসেছে। ২০০৪ সালে খনিকর্মীর পুরাতন ডরমিটরি চীনা গবেষণাকেন্দ্র হুয়াং হ্য স্টেশনে পরিণত হয়। এখানে শুধু দুটি ঋতু আছে। মার্চ ও সেপ্টেম্বর মাস বছরকে গ্রীষ্মকাল ও শীতকালে ভাগ করে। গ্রীষ্মকালে এ জেলাটি ব্যস্ত একটি জায়গায় পরিণত হয়। চীনের বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা থেকে আসা গবেষকরা হুয়াং হ্য স্টেশনে এসেছেন। তারা গাড়ি বা নৌকায় করে আবার মাঝে মাঝে হেঁটে হেঁটে বাইরে হিমবাহ, মাটি ও বায়ু নিয়ে গবেষণা করেন। কখনও কখনও আর্কটিক শিয়াল, সীল, মেরু ভালুকের সঙ্গে দেখা হয় তাদের। তবে শীতকালে গাঢ় অন্ধকারের কারণে বাইরে যাওয়া কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তাই মহাকাশ পদার্থবিজ্ঞান গবেষকরা ছাড়া সবাই চলে যান। লি বিনের গবেষণার মূল বিষয় হলো আরোরা আর গ্রীষ্মকালে আরোরা দেখতে পাওয়া যায় না বলে লি বিন শীতকালে গবেষণা স্টেশনে থাকেন।