বাংলা

উত্তর মেরুর রাতের প্রহরী লি বিন

CMGPublished: 2023-12-06 10:13:25
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

মেরুতে মানুষের অন্বেষণ কাজ চালানোর জন্য নতুন অ্যালেসুন্ড নামের একটি ছোট জেলা খুব বিখ্যাত। এ জেলা পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত এবং উত্তর মেরুতে গবেষণার কেন্দ্রও বটে। এখানে অবস্থিত হুয়াং হ্য স্টেশন হলো চীনের মেরু গবেষণাকেন্দ্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্তরের একটি। এ বছরের শীতকাল শুরু হয়েছে এবং এখানে সূর্যোদয় নেই। দীর্ঘ রাতে অন্ধকারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন হুয়াং হ্য গবেষণাকেন্দ্রের কর্মী, উপ-গবেষক লি বিন। আরোরা বা মেরুপ্রভা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে স্পেস ফিজিক্স গবেষণায় নীরবে অবদান রাখছেন তিনি।

৭৯ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে অবস্থিত নতুন অ্যালেসুন্ড নরওয়ের স্পিটসবার্গেন দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপ এবং মানবজাতির সবচেয়ে উত্তরের বসতি। প্রতি বছরের এপ্রিল মাসের শেষ দিক থেকে আগস্ট মাসের শেষ দিক পর্যন্ত মানুষ চরম সূর্য দেখতে আসেন এখানে। তবে বাকি সময় স্থানীয়দেরকে ১২০ দিনের অন্ধকার সহ্য করতে হয়।

কয়লা খনি অনুসন্ধান করতে প্রথমে এ জায়গাটিতে আসে মানুষ এবং অনেক অন্বেষণকারী এখানে জড়ো হন। তারা এখান থেকে ১ হাজার ২শ’ কিলোমিটার দূরে উত্তর মেরুতে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। ১৯২৬ সালে নরওয়ের অনুসন্ধানকারী রোনান্ড আমন্ডসেন বন্ধুর সঙ্গে আকাশযান নিয়ে উত্তর মেরু অতিক্রম করেন এবং তিনিই ইতিহাসের প্রথম মানুষ, যিনি সর্বদক্ষিণ ও উত্তর মেরুতে পৌঁছেছেন। এর আগে এক বছর অর্থাৎ ১৯২৫ সালে চীন স্পিটসবার্গেন দ্বীপপুঞ্জ চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং এ চুক্তি অনুযায়ী উত্তর মেরুর নির্দিষ্ট এলাকায় আসা-যাওয়ার অধিকার অর্জন করে। চীন সেখানে সমানভাবে গবেষণা, মত্স্য, শিকার, খনিসহ উত্পাদন ও ব্যবসা করতে পারে। তবে তখন দুর্বল একটি দেশ হিসেবে চীনের তেমন অর্থ ছিল না।

এর ৮০ বছর পর চীন নতুন অ্যালেসুন্ডে এসেছে। ২০০৪ সালে খনিকর্মীর পুরাতন ডরমিটরি চীনা গবেষণাকেন্দ্র হুয়াং হ্য স্টেশনে পরিণত হয়। এখানে শুধু দুটি ঋতু আছে। মার্চ ও সেপ্টেম্বর মাস বছরকে গ্রীষ্মকাল ও শীতকালে ভাগ করে। গ্রীষ্মকালে এ জেলাটি ব্যস্ত একটি জায়গায় পরিণত হয়। চীনের বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা থেকে আসা গবেষকরা হুয়াং হ্য স্টেশনে এসেছেন। তারা গাড়ি বা নৌকায় করে আবার মাঝে মাঝে হেঁটে হেঁটে বাইরে হিমবাহ, মাটি ও বায়ু নিয়ে গবেষণা করেন। কখনও কখনও আর্কটিক শিয়াল, সীল, মেরু ভালুকের সঙ্গে দেখা হয় তাদের। তবে শীতকালে গাঢ় অন্ধকারের কারণে বাইরে যাওয়া কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তাই মহাকাশ পদার্থবিজ্ঞান গবেষকরা ছাড়া সবাই চলে যান। লি বিনের গবেষণার মূল বিষয় হলো আরোরা আর গ্রীষ্মকালে আরোরা দেখতে পাওয়া যায় না বলে লি বিন শীতকালে গবেষণা স্টেশনে থাকেন।

এসময় লি বিন কীভাবে দিন কাটান? সকালে ঘুম থেকে জাগার পর তিনি প্রথমে চীনে তার সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ নিয়ে কথা বলেন। তারপর অফিস শেষ হবার পর পরিবারের সঙ্গে ভিডিওর মাধ্যমে কথা বলেন। সন্ধ্যা ৬টার পর তার ব্যস্ততম সময় শুরু হয়। তিনি নতুন অ্যালেসুন্ড, স্পিটসবার্গেন দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী ও আইসল্যান্ডের কেলহে তিনটি জায়গার তিনটি আরোরা পর্যবেক্ষণ স্থাপনা পরিচালনা করেন। এসব পর্যবেক্ষণ ডেটা চীনের দক্ষিণ ও উত্তর মেরু ডেটা কেন্দ্রের ওয়াবসাইটে আপলোড করা হয় এবং সব আরোরা পর্যবেক্ষক ও অনুরাগী ওয়েবসাইটে ডেটা দেখতে ও ডাউনলোড করতে পারেন।

যেদিন তীব্র আরোরা হয় লি বিন ক্যামারা নিয়ে বাইরে গিয়ে ছবি তোলেন। যদি তুষারপাত হয়, তবে তিনি মাইনাস ২০-৩০ ডিগ্রির শীতে হুয়াং হ্য স্টেশনের সব কেবল ও স্থাপনার নিরাপত্তা চেক করেন।

নতুন অ্যালেসুন্ডে একটি ক্যান্টিন আছে। সেখানে তিন বেলা নানা দেশের গবেষকদের জন্য খাবার সরবরাহ করা হয়। রাতে কাজ করার কারণে লি বিন সাধারণত সেখানে নাস্তা খেতে পারেন না। দুপুর ১২টার দিকে, তিনি সেখানে গিয়ে খাবার খান। গভীর রাতে তিনি শুধু ইনস্ট্যান্ট নুডলস ও টিনজাত খাবার খান।

আসলে বিশ্বের অনেক জায়গায় মেরুপ্রভা পর্যবেক্ষণ করা যায়, তবে নতুন অ্যালেসুন্ডে রয়েছে বিশেষ সুবিধা। উচ্চ অক্ষাংশের কারণে এখানে শীতকালে দিন বা রাতের যে কোনও সময়ে আরোরা দেখা যায়। বিশেষ করে দুপুর ১২টার দিকে এখানে যে আরোরা দেখা যায় তা গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

হুয়াং হ্য স্টেশন চীনের সবচেয়ে দূরবর্তী অক্ষাংশের একটি মেরু গবেষণাকেন্দ্র তবে উত্তর আটলান্টিক স্রোতের কারণে এখানে শীতকালে দক্ষিণ মেরুর মতো এতো শীত লাগে না। লি বিন বলেন, যদিও এখানে মাঝে মাঝে তুষারপাত হয়, তবে গড় তাপমাত্রা মাইনাস ১৫ ডিগ্রির কাছাকাছি থাকে। যদি বাতাস থাকে, তাহলে অতো শীত লাগে না। একই অক্ষাংশের দক্ষিণ মেরুতে শীতকালের তাপমাত্রা উঠতে পারে মাইনাস ৬০ ডিগ্রি পর্যন্ত। এ পর্যন্ত কোনও চীনা গবেষক দক্ষিণ মেরুর স্টেশনে শীতকাল কাটাননি।

আরোরা সাধারণত দুটি রঙের। লাল ও সবুজ। মানুষ ‘সুন্দর’ ও ‘অসাধারণ’ এ শব্দগুলো দিয়ে আরোরার সৌন্দর্য বর্ণনা করে, তবে লি বিনকে সবাই সবসময় এমন প্রশ্ন করে, আরোরা নিয়ে গবেষণার কারণ কী? অর্থ কী?

লি বিন বলেন, জরুরি কোনও সমস্যা আরোরা গবেষণার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে না, তবে মহাকাশ পদার্থবিদ্যার জন্য আরোরা গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ডেটার যোগান দেয় এবং পৃথিবীর চুম্বকমণ্ডল নিয়ে মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধি করে। চুম্বকমণ্ডলের অবস্থার মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীর মহাকাশের পরিবেশের ধারা সম্পর্কে জানতে পারে। এটা উপগ্রহের উৎক্ষেপণ ও মহাকাশ টেলিযোগাযোগের জন্য তাত্পর্যপূর্ণ।

আরোরা উচ্চ অক্ষাংশের তুষার ও বৃষ্টির মতো। এখানে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক স্থাপনার উপর মহাকাশ প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন যোগাযোগ ও নেভিগেশন স্যাটেলাইট, ট্রান্সমিশন গ্রিড ইত্যাদি। মানুষ যদি আরোরা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে চৌম্বকীয় ঝড়ের সময় ও তীব্রতা সম্পর্কে পূর্বাভাস দিতে পারে, তাহলে সময়মতো প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় এবং স্থাপনার উপর চৌম্বকীয় ঝড়ের প্রভাব কমানো যায়।

আমরা বাইরে যাওয়ার সময় আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখতে পছন্দ করি। আর আরোরা হলো মহাকাশের আবহাওয়ার পূর্বাভাস। যেহেতু মানবজাতি পৃথিবীর বাইরে যেমন চাঁদে বা মঙ্গলে ভ্রমণ করতে পারে, তাই মহাকাশের আবহাওয়া দেখার প্রয়োজন। অদূর ভবিষ্যতে মানুষ মহাকাশের আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী নিজের মহাকাশ ভ্রমণ সমন্বয় করবে। লি বিন আরও বলেন, যদিও এখন তার গবেষণা কোনও কাজে লাগছে না, তবে এ কাজ করতে হবে। প্রাকৃতিতে অজানা একটি বিষয় নিয়ে গবেষণা করা হলো বিজ্ঞানের মূল বিষয়। আমরা শুরুতে কেবল একটি বিষয় সম্পর্কে জানি, পরে তা ব্যবহার করতে পারি। একজন প্রাকৃতিক বিজ্ঞানকর্মী হিসেবে লি বিন মনে করেন, তার কাজ প্রকৃতির প্রতি তার কৌতূহল মিটানো এবং তার শখের সঙ্গে কাজের সমন্বয় ঘটাতে পারছেন বলে তিনি খুব খুশি।

লি বিন শুরুতে মহাকাশ পদার্থবিদ্যা নিয়ে লেখাপড়া করেননি। তবে এটি তার পিএইচডি গবেষণার বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি শুরুতে প্রিন্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং, তারপর প্লাজমা ফিজিক্স নিয়ে লেখাপড়া করেন। তার গবেষণার জন্য পেশাদার সরঞ্জাম ছাড়া ক্যামেরাও গুরুত্বপূর্ণ একটি টুল। তার গবেষণায় তার সব মেজর কাজে লাগছে।

২০১৮ সালের শীতকালে লি বিন আরোরার ছবি তোলেন এবং তিনি আবিষ্কার করেন যে ছোট এমন একটি আরোরা বেল্ট তিনি দেখেছেন, যা আগে কখনও আর কেউ দেখেননি। পরে অন্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন, এটি নতুন একটি আবিষ্কার। এখন তিনি নতুন আবিষ্কার নিয়ে প্রবন্ধ লিখছেন। তার মতে, এটি মহাকাশ আবহাওয়ার উপর ম্যাগনেটোস্ফিয়ার এবং আয়নোস্ফিয়ারের প্রভাবের প্রতিফলন।

লি বিন সব সময় বলেন, তিনি নিজে আরোরা বিষয়ক আধা বিশেষজ্ঞ। তিনি সাধারণ মানুষের মতো সহজ ভাষায় আরোরা বর্ণনা করেন, যাতে আরও মানুষ সেটা বুঝতে পারে।

নতুন অ্যালেসুন্ডে চীনা গবেষণাকেন্দ্রে আরোরা পর্যবেক্ষণের সরঞ্জাম সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি নরওয়ে মেরু গবেষণালয়ও আরোরা নিয়ে গবেষণা করে। লি বিনের মতে, বিভিন্ন দেশ এ ক্ষেত্রে প্রতিদ্বিন্দ্বিতা করে না, বরং প্রাকৃতিক ঘটনা নিয়ে সবাই আরও ডেটা অর্জন করতে চায় এবং পরস্পরের সঙ্গে শেয়ার করে। এটা গবেষণার জন্য সহায়ক।

মানুষের জন্য মেরু বিপদজনক একটি জায়গা। যদিও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনেক উন্নত হয়েছে, তবে এখনও মেরু গবেষণা কর্মীরা ঝুঁকির মধ্যে কাজ করেন। প্রতি বছরে নতুন অ্যালেসুন্ডে মানুষের ওপর মেরু ভালুকের আক্রমণের ঘটনা ঘটে। তাই এখানে হুয়াং হ্য স্টেশনসহ সব স্টেশনের দরজা খোলা থাকে। প্রয়োজন হলে সবাই কাছে একটি ঘরে সাশ্রয় নিতে পারেন। মেরু ভালুক বাইরে থেকে কেবল দরজা ধাক্কা দিতে পারে, টান দিতে পারে না। তাই এখানে দরজা এমনভাবে বানানো যে সেটা খুলতে ভেতর থেকে ধাক্কা দিতে হয়।

এখানে যদি কোনও জরুরি অবস্থা হয় সবাইও পরস্পরকে সাহায্য করে। বিপদজনক ঘটনা ছাড়া দীর্ঘসময়ে অন্ধকারে থাকা গবেষকদের জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে হুয়াং হ্য স্টেশনে শীতকালে একা একা অন্ধকারে কয়েক মাস থাকতে হয়। নিজের মানসিক অবস্থা ভালো থাকলে এমন কঠিন অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া যায়। এখানে বিনোদনও কম, এমনকি ক্যান্টিনে ম্যাগাজিনের সুডোকু গেম পূরণ করেন গবেষকরা।

লি বিন বলেন, তিনি প্রতিদিন দেশের সহকর্মী ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন এবং বিভিন্ন দেশের গবেষকদের মধ্যেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ক্যান্টিনে যদি কেউ কাউকে না দেখেন বা কারও মন খারাপ থাকে, তখন সবাই তার খোঁজ-খবর নেন।

লি বিনের একজন ভালো বন্ধু ইতালির গবেষক সিমোনেটা মন্টাগুটি সম্প্রতি পদত্যাগ করেন। দক্ষিণ মেরু ও উত্তর মেরুতে শীতকাল কাটানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে ৫০ বছর বয়সি এ নারীর। তবে উনি এখন নতুন জীবনযাপন করতে চান। তাই তিনি পদত্যাগ করেছেন। তবে লি বিন এখানেই থাকবেন। কারণ তিনি উত্তর মেরু ও আরোরা পছন্দ করেন আর দক্ষিণ মেরুর তুলনায় এখানে আবহাওয়া তুলনামূলক ভালো, মানুষের মধ্যে সম্পর্কও ঘনিষ্ঠ। দক্ষিণ মেরুতে সবাই প্রায় নিজ নিজের দেশের স্টেশনে থাকেন, তবে নতুন অ্যালেসুন্ড একটি ছোট জাতিসংঘের মতো। সবাই এখানে খান, ব্যায়াম করেন, কাজ ও জীবনযাপন নিয়ে কথা বলেন। সবাই নিজ-নিজ অভিজ্ঞতাও শেয়ার করেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ গত মাসে দক্ষিণ মেরুতে ছিলেন আর এখন উত্তর মেরুতে এসেছেন। লি বিন বলেন, শুধু এখানে তিনি তার সঙ্গে অভিন্ন কথা বলার মানুষ খুঁজে পান।

যদিও বিভিন্ন দেশের মধ্যে বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে, তবে সহযোগিতাই বেশি। যেমন জলবায়ু পরিবর্তন অভিন্ন একটি বিষয়। অন্য জায়গার তুলনায় মেরুতে আরও সহজে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব উপলব্ধি করা যায়। লি বিনের মনে আছে, ২০১৮ সালে যখন তিনি হুয়াং হ্য স্টেশনে আসেন তখন কিছু সামুদ্রিক বরফ হতো, তবে এ বছর কোনও বরফই হয়নি। এটা বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রমাণ। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর মেরুতে বরফ দ্রুত কমে যাচ্ছে, যার ফলে সেখানকার প্রাণীর জীবন হুমকির মধ্যে পড়েছে। মেরুতে প্রাণী ও হিমবাহের ওপর বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব গবেষণার মাধ্যমে আগামী কয়েক দশকে পৃথিবীর আবহাওয়া ও পরিবেশের পরিবর্তন অনুমান করা যাবে।

হুয়াং হ্য স্টেশনের গবেষণা ফল শুধু চীন নয়, অন্য দেশের সঙ্গে শেয়ার করা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হুয়াং হ্য স্টেশন উত্তর মেরুর দূষণ পর্যবেক্ষণ করে আসে। কোন কোন বিষয় দূষণ সৃষ্টি করে, তা কোথা থেকে আসে এবং পরিবেশের ওপর কী কী প্রভাব ফেলে - এ সব নিয়ে গবেষণা করে চীন। আর এমন গবেষণা দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। কারণ সবার ওপর প্রভাব ফেলে দূষণ। তাই অন্য দেশের গবেষকও চীনের গবেষণা ফলাফল নিয়ে আগ্রহী।

সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি কার্যকর হওয়ার পর, মেরু অঞ্চলে চীনের গবেষণা দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে। ১৯৮৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত চীন দক্ষিণ মেরুতে চারটি স্টেশন নির্মাণ করেছে এবং পঞ্চম স্টেশন নির্মিত হচ্ছে। পাশাপাশি উত্তর মেরুতে গবেষণা কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে আইসল্যান্ডে চীন-আইসল্যান্ড যৌথ পর্যবেক্ষণ স্টেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। আকাশের ওপরে, মাঠির ভেতরে, মেরুতে ও সমুদ্রে মানুষ প্রাকৃতিক অন্বেষণ করতে সব জায়গায় যাচ্ছে। এটা মানবজাতির বুদ্ধি ও সাহসের প্রতিফলন এবং একটি দেশের দক্ষতার প্রমাণ। চীন বিশ্বের কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি যারা মেরু অঞ্চলে স্বাধীনভাবে গবেষণা করতে পারে ও গবেষণা স্টেশন নির্মাণ করতে পারে। মেরু বিষয়ক ব্যাপারে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে চীন। আগামী বছর পালিত হবে দক্ষিণ মেরুতে চীনা গবেষণার ৪০তম বার্ষিকী এবং উত্তর মেরুতে হুয়াং হ্য স্টেশন নির্মাণের ২০তম বার্ষিকী। চীন মেরু গবেষণার ওপর গুরুত্ব দেয় সরকার এবং এর উজ্জ্বল এক ভবিষ্যত আছে বলে বিশ্বাস করেন লি বিনসহ চীনা গবেষকরা।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn