‘চলতি বাণিজ্য’-পূর্ব ২৫
ভিনদেশে চীন:
দারিদ্র্য বিমোচনে নেপালকে সহযোগিতা দেবে চীন
সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: দারিদ্র্য বিমোচন ও পারস্পরিক সহযোগিতা আরও জোরদার করতে একসঙ্গে কাজ করবে চীন ও নেপাল। নেপালে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ছেনসং সম্প্রতি এ কথা বলেন। তিনি জানান, হিমালয় পর্বতমালা হয়ে দুই দেশের মধ্যকার যোগাযাগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা, উচ্চগতির রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠাসহ নানা প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে চীন। বিশেষ করে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের মাধ্যমে নেপালের যোগাযোগ-অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।
চীনের প্রস্তাব করা বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের অন্যতম সহযোগী দেশ নেপাল। হিমালের কোল ঘেষে অবস্থান করা এই দেশটি চীনের সীমানা ঘেঁষা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশও। তাই তো দক্ষিণ এশিয়ায় বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ এগিয়ে নিতে নেপালের সহযোগিতাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখে চীন।
এমনই প্রেক্ষাপটে নেপালের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে এগিয়ে এসেছে চীন। নেপালে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ছেন সং সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, করোনা মহামারিতে নেপালের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে চীনের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন আশা জাগায়। বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের অংশ গ্রহনের ফলে এখানকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নের এক সুযোগ তৈরি হয়েছে।
তিনি জানান, দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে নেপালের অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে চীন। রাষ্ট্রদূত বলেন, দেশটির দারিদ্র্য বিমোচনে চীনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায় নেপাল। রাষ্ট্রদূত জানান, ২০১৫ সালের ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত রাজধানী কাঠমন্ডুর কেন্দ্রস্থল দুরবার স্কয়ারে অবস্থিত বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্যতম স্থাপনা ৯-তলা বসন্তপুর প্যালেস কমপ্লেক্স পুনর্নিমাণে কাজ করছে চীন। রাষ্ট্রদূত জানান, ২০১৭ সালে কাজ শুরু করার পর চীনের কাঠ শিল্পে ব্যবহৃত প্রযুক্তির কল্যাণে এরইমধ্যে রাজপ্রাসাদটি তার নিজস্ব ঐতিহাসিক রূপ ফিরে পেয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, দশ বছর আগেও মারাত্মক বিদ্যুৎ সংকটে ছিলো নেপাল। বিদ্যুতের জন্য পুরোপুরি ভারতের উপর নির্ভরশীল ছিলো নেপাল। সে সময় দিনে অনেক সময় ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকতো। তিনি জানান, এ সময় চীনা কোম্পানি এখানে বাস্তবায়ন করে ‘থ্রি গর্জেস প্রজেক্ট’ নামের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ফলে এ খাতে ঘটে যায় এক বিরাট বিপ্লব।
ছেন সং, নেপালে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত
“আমরা বলতে পারি খুব শিগগিরই নেপালের বিদ্যুৎ সংকট দূর হবে। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে নেপালে বিদ্যুতের সংকট থাকে। তবে বর্ষা মৌসুমি আবার নেপাল বিদ্যুৎ রফতানি করে। নেপালের পাওয়ার সাপ্লাই ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যেই নেপাল বিদ্যুৎ সংকট থেকে বের হয়ে যাবে।“
২০১৯ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের নেপাল সফরের সময় হিমাল পর্বতমালা হয়ে ত্রি-মাত্রিক আন্তঃযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপনের ব্যাপারে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়। সেই উদাহরণ তুলে ধরে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, উচ্চ গতির রেলযোগাযোগের বিষয়ে নেপালী জনগণের আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
“হিমালয় পর্বতমালার দক্ষিণাংশের একটি বড় অংশ এখানে পড়েছে। সারা বিশ্বেই রেল সংযোগের ক্ষেত্রে নানা ধরনের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়। এখনো অনেক সমস্যা সমাধান করতে হবে। নেপালের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নাগরিক ও বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি চীন ফর করেছেন, চীনের উচ্চ গতির রেল ভ্রমণ করেছেন। তারাই বলছেন, চীন যদি এমন একটি রেলপথ নির্মাণ করতে পারে এবং পাহাড়ে উচ্চ গতির রেলযোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয় তাহলে নেপালও পারবে। এতে অবশ্যই চীনের সহযোগিতা ও চীনের প্রযুক্তি দরকার হবে। চীনের প্রযুক্তির উপর তাদের পুরো আস্থা আছে।“
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, দারিদ্র্য দূর করতে ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নেপালে বর্তমানে কাজ করছে চীনের পল্লী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির দারিদ্র্য বিমোচন করে অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তিনি।
কোম্পানি প্রোফাইল:
https://eng.yidaiyilu.gov.cn/qwyw/rdxw/313328.htm
চীনের বাজারে আরও বিনিয়োগ নিয়ে আসছে ফরাসী কোম্পানি সুয়েজ
সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনের বাজার ধরতে আরও বেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসছে ফরাসী কোম্পানি সুয়েজ গ্রুপ। পরিবেশ দূষণ রোধ ও পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ক নানা পণ্য বিপণন করে সুয়েজ। বিশেষ করে পানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নানা সেবা দেয় তারা। চীনের বাজারে কাজ করার সুযোগকে অনেকটা আশীর্বাদ হিসেবে দেখছে সুয়েজ।
চীনের পরিবেশবান্ধব নানা পন্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ফলে এ বিষয়ক নানা পণ্য ও সেবার খোঁজে মানুষ। মানুষের এই চাহিদাই কাজে লাগিয়ে বাজারে প্রভাব সৃষ্টি করতে মরিয়া সুয়েজ।
সুয়েজ গ্রুপের চেয়ারওম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা সৌশান জানান, ২০২৩ থেকে ২০২৭ সাল নাগাদ সময়ের মধ্যে লাভের মুখ দেখার প্রত্যাশা তাদের। তিনি জানান, চীন সরকার এই খাতে বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানানোয় তারা এই দেশে ব্যবসা করতে বিনিয়োগ নিয়ে এসেছেন।
চীনে পরিবেশ বিষয়ক বিভিন্ন পণ্যের ব্যাপক চাহিদা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দীর্ঘ ৫০ বছর পর চীন কম কার্বন নিঃসরণ হয় এমন পরিবেশবান্ধব পণ্য নিয়ে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে। এই আগ্রহ চীনাদের মধ্যে এ ধরনের প্রযুক্তি ও পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত করেছে। চীনের এই বিশাল বাজার ব্যবসা প্রসারের ক্ষেত্রে ভালো কাজে লাগবে বলেও মনে করেন তিনি।