মেড ইন চায়না: পর্ব-১১: উডব্লক প্রিন্টিং
চীন থেকে কী করে ছড়িয়ে পড়লো উডব্লক প্রিন্টিং? চলুন সেটা শোনা যাক শান্তা মারিয়ার কাছ থেকে
চীনে উডব্লক প্রিন্টিং জনপ্রিয় হওয়ার পরপরই এ পদ্ধতির কথা জানতে পারে কোরিয়া ও জাপানের বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা। ১৯৬৬ সালে আজকের দক্ষিণ কোরিয়ায় আবিষ্কার হয় দ্য গ্রেট ধরনি সূত্র’র কিছু স্ক্রল। পরীক্ষায় দেখা যায়, সেগুলো উডব্লক প্রিন্টিং পদ্ধতিতে ছাপা হয়েছিল ৭০৪ থেকে ৭৫১ সালের মাঝামাঝি সময়ে। ৮ সেন্টিমিটার চওড়া ও ৬৩০ সেন্টিমিটার লম্বা স্ক্রলগুলো তুঁত কাগজের ওপর মুদ্রিত ছিল। পরে জাপানে পাওয়া যায় ৭৭০ সালে ছাপা হওয়া ধরণী সূত্রের বেশ কিছু মুদ্রিত কপি। জানা যায়, ওই সময়কার জাপানি সম্রাজ্ঞী শোতোকু ওই মন্ত্রগুলোর ১০ লাখ কপি তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। অনুলিপিগুলো একটি ছোট কাঠের প্যাগোডায় সংরক্ষণ করা হয়েছিল। জাপানে এগুলো একসঙ্গে হাইকুমান্তো দারানি নামে পরিচিত।
পরে এক হাজার খ্রিস্টাব্দের দিকে উডব্লক প্রিন্টিং ছড়িয়ে পড়ে ইউরেশিয়াজুড়ে। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যেও তৈরি হলো বেশ কিছু নথি। ১৩০০ সালের দিকে, অর্থাৎ চীনে ব্যাপক হারে প্রচলনের ছয়শ বছর পরে উডব্লক প্রিন্টিংয়ের কথা জানতে পারে ইউরোপে। ওই সময় কাপড়ে এ ধরনের মুদ্রণ করতে শুরু করে ইউরোপীয়রা।
৯৩২ থেকে ৯৫৫ সাল নাগাদ চীনের সোং রাজবংশের আমলে উডব্লক প্রিন্টিংয়ে ছাপা হতে শুরু করে চীনা ক্লাসিক গল্প। তখন চীনের বিদ্যালয়গুলোতে ক্লাসিক বইগুলো এ পদ্ধতিতে ছাপিয়ে বিতরণ করা হতো শিক্ষার্থীদের মাঝে। ধ্রুপদী সাহিত্যের পাশাপাশি ওই সময় উডব্লকে ছাপা হয় ইতিহাস, দর্শন, এনসাইক্লোপিডিয়া এমনকি যুদ্ধকৌশল ও ভেষজ ওষুধ সংক্রান্ত বইও।
৯৭১ সালে উডব্লক প্রিন্টিংয়ে চীনের ছেংতুতে ছাপানো শুরু হয় বৌদ্ধদের পবিত্র গ্রন্থ ত্রিপিটক। এর জন্য এক লাখ ৩০ হাজার ব্লক তৈরিতে সময় লেগেছিল টানা ১০ বছর। ৯৮৩ সালে গ্রন্থটির সিছুয়ান সংস্করণও প্রকাশ হয়। যার নাম রাখা হয় খাইবাও ত্রিপিটক।