মেড ইন চায়না: পর্ব-১১: উডব্লক প্রিন্টিং
কেমন করে এলো উডব্লক প্রিন্টিং? এ নিয়ে সরাসরি কোনো আবিষ্কর্তার নাম না পাওয়া গেলেও যথারীতি একটি গল্প আছে।
চীনের একটি প্রাচীন ইতিহাস গ্রন্থের নাম ছি শু। ইংরেজিতে যাকে বলে বুক অব ছি। লিয়াং রাজবংশের সময়কালে ৪৭৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৫০২ সাল পর্যন্ত এই বইটি লিখেছিলেন প্রাচীন চীনা ইতিহাসবিদ সিয়াও চিসিয়ান। সেই বইতে উল্লেখ করা হয়েছে কং সুয়ান-ই নামের এক লোকের কথা। যার ভাষ্য হলো, তাকে এক অতিমানবীয় প্রাণী এসে একটা জেড পাথর দেয়। যে পাথর কাগজের ওপর চাপ দিলেই ফুটে উঠে এক রহস্যময় ছবি। কং সেই জেড পাথর দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন স্থানীয় গভর্নরকে। এমনকি তিনি নাকি এ পাথর দিয়ে কাগজে ছাপচিত্র তৈরি করে সেটাকে জাদু হিসেবে উপস্থাপন করতেন সবার সামনে।
ইতিহাসবিদরা অবশ্য সেই জেড পাথরকে জাদুকরি কিছু নয়, বরং বিশ্বের প্রথম ব্লক প্রিন্টারই বলছেন। আর ঠিক ওই ধরনের ছাপচিত্র দেখা যায় আড়াই হাজার বছর আগের হান রাজবংশের সময়কার সিল্কের কাপড়েও। তখন অবশ্য কাপড়ে ফুলের নকশা তৈরিতেই ব্যবহার করা হতো পাথরের ব্লক।
সপ্তদশ শতকে চীনের উডব্লক প্রিন্ট পদ্ধতির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির পেছনে একটি বড় ভূমিকা রাখেন মহাযান নামের বুদ্ধিজমের একটি শাখা। ওই সময় বুদ্ধিস্টরা তাদের নানা মন্ত্র ও তথ্য ছড়িয়ে দিতে এই উডব্লক প্রিন্টিং পদ্ধতির আশ্রয় নেয়। ওেই সময় কাগজের স্ক্রলে তারা ব্লক প্রিন্ট করে তৈরি করেছিলেন বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্রাকৃতির স্ক্রল বা রোল করা মন্ত্র ছাপানো কাগজ, যে কাগজগুলোকে একসঙ্গে বলা হয় ধরনী নামে। ১৯৭৪ সালে ওই ধরনীর একটি অংশ পাওয়া গিয়েছিল চীনের শায়ানসি প্রদেশের সি’আনের একটি সমাধিতে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা জানালেন, স্ক্রলগুলো ছাপা হয়েছিল থাং রাজবংশের আমলে। সেই সঙ্গে পাওয়া গিয়েছিল স্বধর্ম পুন্দরিকা সূত্র নামে একই ধরনের আরেকটি স্ক্রল। উডব্লক পদ্ধতিতে যা ছাপা হয়েছিল ৬৯০ থেকে ৬৯৯ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে।