মেড ইন চায়না: পর্ব-৮: ছুচু খেলা
ছুচু খেলার মাঠের নাম চু ছাং। এখনকার ফুটবল মাঠে দুই প্রান্তে দুটো গোলপোস্ট থাকলেও ছুচু খেলায় মাঠের মাঝে থাকতো অর্ধচন্দ্রাকৃতির গোলপোস্ট।
ছয়শ থেকে নয়শ সালে থাং রাজবংশের শাসনামলে ছুচু খেলার বলের ভেতর পাখির পালকের বদলে ঢোকানো হয় বাতাস। এতে করে বলে কিক দেওয়ার কাজটা হয়ে যায় আরও সহজ। ছুচুর জনপ্রিয়তা বেড়ে যায় আরেক দফা। চীনের আরও অনেক স্থানে তৈরি হতে থাকে বল খেলার মাঠ।
থাং রাজবংশের সময়ই চীনে চালু হয় নারীদের ছুচু দল। ওই সময় চীনের বিশেষজ্ঞ ও বুদ্ধিজীবীরাও খেলতেন মজার এই বল খেলা।
চীনের আবিষ্কার ছুচুর দেখাদেখিই মূলত বল জাতীয় আরও অনেক খেলা আবিষ্কার হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো জাপানের কেমারি। ছুচু খেলারই আরেক নাম বলা যায় একে। কেমারি খেলার বলটি তৈরি করা হতো হরিণের চামড়া দিয়ে, আর বলের ভেতর থাকতো বার্লি দানা।
ছুচু তথা আজকের ফুটবলের আদিপুরুষ এ খেলার মূল উত্থানটি ঘটে মূলত সোং রাজবংশের আমলে। ৯৬০ থেকে ১২৭৯ সাল পর্যন্ত টিকে থাকা এ রাজবংশের সময় চীনের সকল শ্রেণির মানুষই খেলতে শুরু করে ছুচু। তখন তারকা ছুচু খেলোয়াড়ও ছিল চীনে। এমনকি এখনকার বড় বড় ক্রীড়া আসরের মতো বাণিজি্যকভাবেও আয়োজন করা হতো ছুচু খেলার।
এই ছুচু কিন্তু শুধু খেলা ছিল না। এটা যে চীনাদের জীবনের একটা অন্যতম অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেটার প্রমাণ পাওয়া যায় প্রাচীন চীনের বিভিন্ন সাহিত্যকর্মেও। হান রাজবংশের সময়কার বিখ্যাত কবি লি ইউ তার কবিতায় ছুচুকে তুলনা করেছিলেন উন্নত জীবনযাপনের একটি উপকরণ হিসেবে।
তবে তেরোশ থেকে ষোলোশ’ সালের দিকে মিং রাজবংশের সময় ছুচু খেলার চল ধীরে ধীরে কমতে থাকে। পরে বল জাতীয় আরও অনেক নতুন খেলার আবির্ভাবের পর ছুচু খেলাটি বলতে গেলে হারিয়েই যায়।
কেমন করে খেলা হতো ছুচু?
এখনকার ছুচু খেলা দেখে ভলিবলের কথা মাথায় আসবে আগে। তবে পার্থক্য হলো, শরীরের যে অংশই ব্যবহার করা হোক না কেন, এ খেলায় বলটিতেহাত লাগানো যাবে না কিছুতেই। প্রতিযোগিতামূলকভাবে যেমন খেলা যায় তেমনি সবাই মিলে বিনোদনের ধাঁচেও খেলা যায় ছুচু। হাওয়া বা পালক ভর্তি চামড়ার একটি বলকে শুধু পা দিয়ে কে কতটা সূক্ষ্ম ও চমৎকারভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে, সেটার ওপর নির্ভর করে কে কত দক্ষ ছুচু খেলোয়াড় হবে। আর ছুচু খেলায় কেউ পারদর্শী হলে তাকে বলা হতো সিয়েশু।