মেড ইন চায়না: পর্ব-৮: ছুচু খেলা
এখনও ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে চীনে ও অন্যান্য দেশে যে ছুচু খেলা হয় তা অনেকটা এমন। একটি মাঝারি আকারের মাঠের ঠিক মাঝে রাখা হয় গোল পোস্ট। বাস্কেট বলের পোস্টের মতো ছুচু খেলার পোস্টটাও থাকবে বেশ কিছুটা উঁচুতে। বেশ খানিকটা উঁচুতে থাকা ওই পোস্টের ঠিক মাঝে থাকবে দুই ফুট ব্যাসের গোলাকার একটি গর্ত। যাকে বলা হয় চোখ। সেই চোখের ভেতর দিয়েই এক পক্ষ আরেক পক্ষের কাঠে বলটাকে ছুড়ে দেয়। তবে শর্ত হলো বলটাকে হাত দিয়ে ধরা যাবে না, আবার বলটা মাটিও স্পর্শ করতে পারবে না। দুই পাশে পাঁচ বা ছয় কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে দশ জন করেও খেলোয়াড় থাকে। যে পক্ষ বল নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে মাটিতে ফেলে দেবে, তারাই হারাবে পয়েন্ট।
অর্থাৎ ছুচুর মূল দক্ষতা হলো বলটাকে মাটিতে না ফেলে কাঠের গর্ত দিয়ে প্রতিপক্ষের দিকে পার করা। গর্ত দিয়ে বল ঠিকঠাক পার করতে পারলেই মিলবে পয়েন্ট। এই অর্থে ছুচুকে ভলিবল বা বাস্কেটবলের পূর্বপুরুষ বললেও ভুল হবে না।
থাং রাজবংশের সময় ছুচুর বল তৈরিতে ব্যবহার করা হতো দুই টুকরো চামড়া। সেলাই করে সেটাকে দেওয়া হতো বলের আকৃতি। চূড়ান্ত সেলাইয়ের আগে বলটার ভেতর বেশি করে পুরে দেওয়া হতো পাখির পালক। এর অনেক অনেক দিন পর আট টুকরো চামড়া সেলাই করে তৈরি হতে লাগলো ছুচুর বল। পরে সোং রাজবংশের সময় ছুচুর বল তৈরি হতো ১২ টুকরো চামড়া দিয়ে। একটি বলের ওজন হতো প্রায় ৬০০ গ্রাম।
ছুচু খেলার সঙ্গে এখনকার যে খেলার সবচেয়ে বেশি মিল পাওয়া যাবে তা হলো ফ্রিস্টাইল ফুটবল। বলের গায়ে হাত না দিয়ে পায়ে পায়ে রেখে নানা কসরত দেখানোই যে খেলার বড় কৃতিত্ব। প্রাচীন বলে এখন ছুচু খেলা যাবে না, এমন কথা কিন্তু নেই। ফিফা মিউজিয়াম ডট কম বলছে, নিয়ম করে ছুচু খেললে স্বাস্থ্য থাকবে ভালো। শরীর ও মন দুটোই একযোগে খাটাতে হয় এ খেলায়। তাই মানসিক অবসাদও কাটাতে পারে এ খেলা।
গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: ফয়সল আবদুল্লাহ
অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ
সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী