মেড ইন চায়না পর্ব-৪ ছাতা
চীনের সংস্কৃতিতে ছাতার গুরুত্ব অনেক। আবিষ্কারের পর দিনে দিনে ছাতা হয়ে ওঠে আভিজাত্য ও গৌরবের প্রতীক। চীনের বিভিন্ন রাজবংশের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের হাতে দেখা যেত ছাতা। এমনকি প্রাচীন চীনের চিত্রকলায় ছাতার রং দেখেও বোঝা যেত কোন ছবিটি কোন রাজবংশের। ওয়েই রাজবংশের শেষের দিকে চীনে নানা ধরনের সরকারি অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হতো ছাতা। ওটাকে বলা হতো লুও ছাতা। এই লুও ছাতাই হয়ে যায় রাজবংশের নানা পদমর্যাদার প্রতীক। তবে পদমর্যাদা অনুযায়ী ছাতার রং হতো ভিন্ন। যেমন হান রাজবংশের তিন নম্বর র্যাংকের ওপরে থাকা কর্মকর্তারা ব্যবহার করতেন সবুজ রঙের ছাতা। আবার সোং রাজবংশের সম্রাটদের হাতে দেখা যেত হলুদ ও লাল রঙের ছাতা।
প্রাচীন চীনে তুঁতের ছাল এবং বাঁশের ফ্রেম থেকে তৈরি করা হতো ছাতা। তবে যেনতেন বাঁশ হলে চলতো না। এর জন্য চাই অন্তত পাঁচ বছরের পুরোনো বাঁশ। সিল্ক দিয়ে যে দামি ছাতা তৈরি হতো তাতে নকশা করার জন্য ডাক পড়তো চীনের শিল্পীদের। তারা তাতে ড্রাগন, প্রকৃতি, প্রাকৃতিক দৃশ্য, ও পৌরাণিক নানা গল্প ফুটিয়ে তুলতেন। এখন চীনের ঐতিহ্যবাহী ছাতার দোকানগুলো এ ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।
অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে ছাতা নিয়ে শোনা যাক আরও কয়েকটা মজার তথ্য
•বিশ্বে বছরে প্রায় ১১০ কোটি ছাতা বিক্রি হয়। এর ৮০ ভাগই তৈরি হয় চীনে। পূর্ব চীনের ফুচিয়ানে আছে তোংশি নামের একটি শহর। তোংশি শব্দটির অর্থই হলো ছাতার টাউন। কারণ চীনে যত ছাতা তৈরি হয় তার তিন ভাগের এক ভাগই তৈরি হয় তোংশিতে।
•চীনে সাধারণ ছাতা তৈরিতেই পার করতে হয় অনেক সূক্ষ্ম ধাপ। মোট ৮০টি ধাপে তৈরি করতে হয় একটি হ্যান্ডমেইড ছাতা।
•চীনা উপকথায় ছাতা হলো নিরাপত্তার প্রতীক। তবে উপহার হিসেবে কিন্তু ছাতা সেখানে মোটেও কাম্য নয়। কারণ চীনে কেউ কারও সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইলে তাকে ছাতা উপহার দেয়।