চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৩৮
‘১০টি দৃশ্যের প্রত্যেকটি ভিন্নরকম। উদাহরণ হিসেবে সন্ধ্যার বর্ণিলতায় উজ্জ্ব্ল লেইফেং প্যাগোডার কথা বলা যেতে পারে। এর প্রধান টোন হচ্ছে আগুনে লাল। এটি অস্তগামী সূর্যের অশেষ সৌন্দর্যকে প্রকাশ করে, জীবনের প্রতি আকুলতা এবং সময়কে স্তব্দ করে দেওয়ার অনুভূতি দেয়। এরকম সব কটি দৃশ্যেরই নিজস্ব অর্থ এবং মর্মবাণী রয়েছে’।
সিজিটিএনের তথ্যচিত্রটিতে প্রকৃত প্রস্তাবে হাংচৌ শহরের ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সুসমন্বয়ের চিত্রই তুলে ধরা হয়েছে।
তথ্যচিত্রটির আরেকটি পর্বে স্থানীয় ভিডিও গেম ডিজাইনার চাং চাওয়ের তৈরি করা ভিডিও চিত্রে গোটা হাংচৌ শহরকেই তুলে ধরা হয়েছে ।
প্রতিবেদন: মাহমুদ হাশিম।
৩. চিরায়ত চীনা সাহিত্য
ছেন শ্যন: যুদ্ধের কবিতায় সিদ্ধি
থাং রাজবংশের স্বর্ণযুগের একজন কবি ছেন শ্যন। তিনি মূলত যুদ্ধের কবিতা লেখার জন্য খ্যাতি পেয়েছেন। থাং যুগের কবিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যুদ্ধ বিষয়ক কবিতা তিনি লিখেছেন। তিন শ’ থাং কবিতার সংকলনেও তার কবিতা রয়েছে।
ছেন শ্যনের জন্ম ৭১৫ সালে হুবেই প্রদেশের চিয়াংলিং শহরে। তার জন্মসাল নিয়ে পন্ডিতদের মধ্যে মতভেদ আছে।
ছেন শ্যনের পরিবার ছিল অভিজাত আমলা পরিবার। তাদের আদি বাসস্থান ছিল হ্যনান প্রদেশের নানইয়াং সিটিতে। পরে তারা চিয়াংলিংয়ে চলে আসেন। তার প্রপিতামহ ও কয়েকজন আত্মীয় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বাবা ছেন চি চিংচৌ শহরের গভর্নর ছিলেন। ছেনের বয়স যখন মাত্র দশ বছর তখন বাবার মৃত্যু হয়। ফলে তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা কিছুটা খারাপ হয়ে পড়ে।
শৈশব থেকেই ছেন বই পড়তে ভালোবাসতেন। বিশেষ করে ইতিহাসের বই। ২০ বছর বয়সে তিনি রাজধানী ছাংআন শহরে যান এবং ৭৪৪ সালে সরকারি চাকরির জন্য চিনশি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন।
৭৪৯ সালে তিনি সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন এবং দশ বছরের বেশি সময় কাজ করেন। সে সময় তিনি মধ্য এশিয়ায় থাং রাজবংশের শাসনাধীন দূরবর্তি অঞ্চলগুলোতে বিশেষ দায়িত্ব পালন করেন। ৭৬৮ সালে তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন। ৭৭০ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যু হয় ছেন শ্যনের।
জীবনের প্রথম দিকে তিনি প্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্ণনামূলক কবিতা লিখতেন। তবে পরের দিকে তার কবিতায় যুদ্ধ বেশি প্রতিফলিত হয়েছে। তার দশ বছরের সামরিক জীবনে যুদ্ধের নির্মমতা, বেদনা, কঠোর প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম উঠে এসেছে। ছেন শ্যনের একটি কবিতা শোনাচ্ছি।
শিরোনাম,
রাজধানীমুখী দূতের সঙ্গে দেখা
পূর্বদিকে তাকাই, পথ চলে গেছে, দূরে বহু দূরে যেখানে আমার ঘর
পুরনো বাহু কাঁপছে, জামার হাতা ভিজে যাচ্ছে অশ্রুতে
হে ঘোড়সওয়ার তোমার সঙ্গে দেখা হলো, কিন্তু কি বার্তা দিব আমি ?
তুলিতে কি লেখা সম্ভব বলো?
শুধু তোমাকে অনুরোধ করি, তাদের বলে দিও, আমি বেঁচে আছি।
এই কবিতায় পরিবারের কাছ থেকে দূরে থাকার অপার বেদনা প্রকাশিত হয়েছে। বিখ্যাত সংকলন‘ তিন শ’ নির্বাচিত থাং কবিতা’য় ছেন শ্যনের সাতটি কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
যুদ্ধে সৈনিক জীবনের কষ্টকে তুলে ধরার জন্য, মানবিক বেদনাবোধকে শিল্পতভাবে প্রকাশের জন্য ছেন শ্যন চিরায়ত চীনা সাহিত্যে অমরত্ব পেয়েছেন।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া।
---------------------------------------------------------------------------
সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দি।
প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম
অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ