চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৩০
ফেংহুয়াং শো’র পরিকল্পনাকারী চু চংহুই জানালেন পর্যটক আকর্ষণে তাদের কার্যক্রমের কথা।
‘পর্যটকদের ভালো অভিজ্ঞতা দিতে আমরা অনেক পরিশ্রম করছি। ফেংহুয়াং শো’তেও নানা বৈচিত্র্য এনেছি। এতে স্থানীয়দের জীবনমানেরও উন্নতি হচ্ছে’।
এ ছাড়াও পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের হুয়াই’আন সিটি, দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশের লিয়াংশান ই অটোনমাস প্রিফেকচারের সিচাং সিটি, মধ্যচীনের হুনান প্রদেশের হেংইয়াং সিটি এবং পূর্ব চীনের শানতং প্রদেশের চিনান সিটিতেও ঢল নেমেছে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের।
প্রতিবেদন: মাহমুদ হাশিম
৩. চিরায়ত চীনা সাহিত্য
কবি ওয়াং হান: যুদ্ধের বিপরীতে জীবন
ছবি: কবি ওয়াং হান
প্রাচীন চীনের সকল কবিই বীর বা যোদ্ধা ছিলেন না। অনেকে ছিলেন শান্তিময় এবং আনন্দমুখর জীবনের পক্ষে। যুদ্ধের নিষ্ফলতা, দুঃখ এবং বিপরীতে জীবনের ও বেঁচে থাকার আনন্দ ফুটে উঠেছে তাদের কবিতায়। এমনি একজন কবি ওয়াং হান। তিনি থাং রাজবংশের সময়কার কবি।
কবির সঠিক জন্মসাল, মৃত্যু এবং জীবন বিষয়ে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না। তবে গবেষকরা ধারণা করেছেন তিনি উচ্চমধ্যবিত্ত বা অভিজাত ধনী পরিবারের সন্তান ছিলেন। ধারণা করা হয় তিনি অষ্টম শতাব্দির কবি ছিলেন। শানসি প্রদেশের চিনইয়াং পরিবারের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ছিল। এ থেকে মনে করা হয় তিনি শানসি প্রদেশের মানুষ ছিলেন।
তিনি থাং রাজবংশের সময়কার কবি ছিলেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
কারণ তিনশ থাং কবিতার বিখ্যাত সংকলনে তার একটি কবিতা রয়েছে।
তার বেশিরভাগ কাজই হারিয়ে গেছে। যে কটি কবিতা রয়েছে সেগুলোর মূল বক্তব্য হলো জীবন খুব সংক্ষিপ্ত। এই জীবনকে হাসি, আনন্দ, প্রেমে উপভোগ করা উচিত।
তার একটি কবিতার নাম লিয়াংচৌর গান। এই কবিতাটিকে যুদ্ধক্ষেত্র অভিমুখে যাত্রা শুরু এই নামেও অভিহিত করা হয়।
আঙুরের মদিরা ভরে নাও রাতে জ্বলে ওঠা জেড পাথরের পেয়ালায়
পিপা গান গেয়ে আমরা পান করি আনন্দে, আমাদের যুদ্ধক্ষেত্রে আবাহন করা হয়েছে
উপহাস করো না যদি আমরা মাতাল হয়ে পড়ি লড়াইয়ের ময়দানে
কতজন যোদ্ধা সুস্থভাবে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারে বলো?
এখানে যে লিয়াংচৌর ভূমির কথা বলা হয়েছে সেটি হান রাজবংশের সময়কার। ১২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে হান ও সিয়ংনু রাজবংশের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল। এই স্থানটি প্রাচীন রেশমপথের একটি গুরুত্বপূর্ণ চেকপোস্ট ছিল।
আর পিপা হলো গিটার ধরনের লোকজ বাদ্যযন্ত্র। প্রায় দুই হাজার বছরের ঐতিহ্য রয়েছে পিপা বাদ্যযন্ত্রের।
এই কবিতায় যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুর ডাক, যোদ্ধার অনিশ্চিত জীবনের বিপরীতে জীবনের জয়গান গাওয়া হয়েছে।
ওয়াং হানের এই কবিতাটি চার পংক্তির। প্রতিটি পংক্তিতে সাতটি করে চায়নিজ ক্যারেকটার বা শব্দ রয়েছে। এই বিশেষ ধরনের কবিতা সাধারণত সুর দিয়ে গাওয়া হতো। প্রতিটি চরণে অন্তঃমিল থাকতো।
প্রাচীন ও মধ্যযুগে মধ্যএশিয়ার প্রচলিত গানের সঙ্গে এর কিছুটা মিল রয়েছে। এটি চিরায়ত চীনা সাহিত্যেরও এক বিশেষ সম্পদ।
প্রতিবেদন ও কবিতা অনুবাদ: শান্তা মারিয়া
---------------------------------------------------------------------------
প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম
অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ
সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।