চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য- ০০৩
হোংতাওর পরিবার ছিল সামরিক ঐতিহ্যবাহী। কিন্তু শৈশব থেকে শিল্প-সাহিত্য, কবিতার প্রতি আগ্রহী ছিলেন হোংতাও। পনেরো বছর বয়সে তিনি নিজে একটি সাহিত্য সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। ২৪ বছর বয়সে ১৫৯৫ সালে তিনি বিশেষ চাকরির জন্য পরীক্ষা চিনশিতে অবতীর্ণ হন এবং কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেন। সরকারি চাকরিও পান। তবে একবছর পর এই চাকরি একঘেয়ে লাগায় সেটি ত্যাগ করেন।
এ সময় তিনি ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন এবং মৌলিক দার্শনিক লি চির সঙ্গে তার আলাপ হয়। তিনি অনেক স্থানে ভ্রমণ করেন। একটি ভ্রমণে তার সঙ্গে যোগ দেন তার বড়ভাই। বড়ভাই ছিলেন বুদ্ধ-কনফুসিয়াস দার্শনিক ধারার একজন সাধক। এ ভ্রমণ হোংতাওর উপর বেশ প্রভাব বিস্তার করে। এই সময়ে লেখা কবিতাগুলো নিয়ে প্রকাশিত হয় তার কাব্যগ্রন্থ চিয়েথুও। হোংতাও এবং তার দু’ভাইয়ের লেখা এক স্বতন্ত্রধারার সৃষ্টি করে। এই ধারায় বলা হয় ভালো কবিতা হলো খাঁটি অনুভূতি এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সমন্বয়।
হোংতাওয়ের বড়ভাই চোংতাও ১৬০০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর হোংতাও ছোট একটি দ্বীপে অবসর জীবন কাটান। তিনি ধ্যান এবং কবিতা লেখার মাধ্যমে তার জীবনের অবশিষ্ট দিনগুলো অতিবাহিত করেন। এ সময়ে লেখা কবিতা নিয়ে প্রকাশিত হয় তার কাব্যগ্রন্থ সিয়াওবি থাংচি।
রাজধানী
রাজধানী শহরের দেয়ালগুলো উজ্জ্বল
প্রশস্ত রাজপথে শোনা যায় লাল পোশাকধারী কর্মকর্তাদের চিৎকার
একজন শুভ্রকেশ নিঃস্ব প্রাজ্ঞ যাচ্ছেন
তার খচ্চরের জিন থেকে ঝুলছে কবিতার পুঁথি
তিনি কাজের সন্ধানে দ্বারে দ্বারে করাঘাত করছেন
দ্বাররক্ষীরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে পরিহাস করছে
দশ জায়গাতেই ব্যর্থ হলেন তিনি
রাস্তা দিয়ে তিনি চলছেন বিষন্ন বদনে।
ধনীদের মোসাহেবী করতে সর্বদা ভয় পেয়েছেন তিনি
শুনেছেন, তোমার চাটুকারিতা যথেষ্ট চটপটে নয়।
একচোখ কালো কাপড়ে ঢাকা
প্রায় অন্ধ বৃদ্ধ মানুষটি পথ চলেন।
কবি ইউয়ান হোংতাও গদ্য লেখাতেও বেশ খ্যাতি পেয়েছিলেন। জীবনের নির্মম সত্যকে তুলে ধরতে তিনি কখনও ভয় পাননি। আর এই সহজ দার্শনিকতাই তাকে চিরায়ত চীনা সাহিত্যে অমর করেছে।
প্রতিবেদন ও কবিতা অনুবাদ: শান্তা মারিয়া।
----------------------------------------------------------------------
চীনের সংস্কৃতি চীনের ঐতিহ্য
প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী, শান্তা মারিয়া
অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ, রফিক বিপুল
প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম।
সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।