দেহঘড়ি পর্ব-০২৩
‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং টিসিএম ভেষজের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা ‘ভেষজের গুণ’।
#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা
কোষ্ঠকাঠিন্য চিকিৎসায় টিসিএম
কোষ্ঠকাঠিন্য ব্যাপক-বিস্তৃত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। জীবনের কোনও না কোনও সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেনি এমন মানুষ নেই। অল্প সময়ের কোষ্ঠকাঠিন্য তেমন চিন্তার কারণ না হলেও এটি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে জটিলতা ডেকে আনতে পারে এবং জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে।
প্রতিদিনই অন্তত একবার একটি নির্দিষ্ট সময়ে মলত্যাগ সবচেয়ে বেশি সুস্থতার লক্ষণ। তবে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, প্রতিদিন ৩ বার থেকে শুরু করে প্রতি সপ্তাহে ৩ বার পর্যন্ত মলত্যাগ স্বাভাবিক। এর কম সংখ্যক বার মল ত্যাগ হলে সেটাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে ধরে নিতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যান্য উপসর্গগুলোর মধ্যে থাকে পেট ফেঁপে যাওয়া, শক্ত বা দলা পাকানো মল এবং মলত্যাগ অসম্পূর্ণ রয়েছে এমন অনুভূতি।
কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার না খাওয়া; প্রয়োজনের তুলনায় কম পানি পান করা; মলত্যাগের চাপ সত্ত্বেও টয়লেটে না যাওয়া; এন্ডোক্রাইন বা স্নায়বিক রোগ যেমন থাইরয়েড রোগ, পারকিনসন্স রোগ বা স্ট্রোক; কোলন বা মলদ্বারে প্রতিবন্ধকতা; কিছু কিছু ওষুধ গ্রহণ যেমন ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট, আয়রন সাপ্লিমেন্ট বা অ্যান্টাসিড ওষুধ, যাতে অ্যালুমিনিয়াম বা ক্যালসিয়াম থাকে; ভ্রমণে থাকা, গর্ভাবস্থা এবং খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন।
তবে ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি বা টিসিএমে কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য তিনটি বিষয়কে প্রধানত দায়ী মনে করা হয়। সেগুলো হলো শরীরে অতিরিক্ত শীতলতা বা অতিরিক্ত উষ্ণতা এবং মূলশক্তি বা ‘ছি’য়ে ভারসাম্যহীনতা। অনেকে কোষ্ঠকাঠিন্য উপশমে জোলাপ গ্রহণ করেন এবং তাতে ফলও পাওয়া যায়। তবে দীর্ঘাদিন জোলাপের ব্যবহার কোলনে পরিবর্তন ঘটাতে পারে, যা পরবর্তীতে ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। টিসিএম চিকিৎসকরা প্রতিটি ধরনের কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য আলাদা আলাদা ভেষজ ফরমুলেশন প্রেসক্রাইব করেন। কোষ্ঠকাঠিন্যের সঠিক চিকিৎসা নির্ভর করে এর কারণের উপর। যারা অতিরিক্ত ঠান্ডায় ভুগছেন তাদের জন্য ভেষজ প্রতিকার বিশেষভাবে কার্যকর। এ ভেষজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে রবার্ব বা রেউচিনি লতা, ঘৃতকুমারী ও তেতো কমলা। জার্নাল অব অল্টারনেটিভ অ্যান্ড কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিনে প্রকাশিত ২০১১ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মলত্যাগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে জোলাপ বা রেচক টিসিএমের প্রাচীন ‘ছয়-ভেষজ ফরমুলেশন’ ৮২ শতাংশ বেশি কার্যকর ছিল।