দেহঘড়ি পর্ব-০১২
‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং টিসিএম ভেষজের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা ‘ভেষজের গুণ’।
#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা
হাঁপানি উপশম করে টিসিএম
হাঁপানি দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগগুলোর অন্যতম। এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট হলো ব্রঙ্কিয়াল টিউবের অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়াশীলতা, শ্লেষ্মা উৎপাদন বৃদ্ধি, শ্বাসনালী সংকীর্ণ হওয়া এবং শ্বাসনালীর আকার পরিবর্তিত হওয়া। এর উপসর্গগুলোর মধ্যে থাকে কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং বুক শক্ত হয়ে যাওয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান বলছে, বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৩০ কোটি মানুষ আক্রান্ত এ রোগে।
ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা ব্যবস্থা বা টিসিএমে হাঁপানিকে বলা হয় ‘সিয়াও ছুয়ান’, যার অর্থ শ্বাসকষ্ট। এ চিকিৎসা ব্যবস্থায় ‘সিয়াও’ ও ‘ছুয়ান’কে আলাদা অসুস্থতা হিসাবে দেখা হয়, যার চিকিৎসাও আলাদা। ‘সিয়াও’র বৈশিষ্ট শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বাঁশির মতো শব্দ করা, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হওয়া, শ্বাসকষ্ট এবং অনুভূমিক অবস্থানে বিশ্রাম নিতে না পারা। অন্যদিকে ‘ছুয়ান’র বৈশিষ্ট শ্বাসকষ্ট, শ্বাস নেওয়ার জন্য সারাক্ষণ মুখ খুলে রাখা, কাঁধ উত্থিত হওয়া, এবং অনুভূমিক অবস্থানে বিশ্রাম নিতে অসুবিধা। ‘সিয়াও’ রোগীদের সাধারণত ‘ছুয়ান’ও থাকে, তবে ‘ছুয়ান’ রোগীদের ‘সিয়াও’ হতে পারে বা নাও হতে পারে।
টিসিএমে মনে করা হয়, বেশ কতগুলো কারণ রয়েছে যা হাঁপানি জাগিয়ে তুলতে পারে। যেমন বাহ্যিক রোগজীবাণুর আক্রমণ, খাদ্যাভ্যাস, মানসিক সমস্যা, জন্মগত দুর্বলতা এবং দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা।
বাহ্যিক প্যাথোজেনিক কারণ, যেমন ঠান্ডা বা তাপ হাঁপানি জাগিয়ে তোলে। এটা ফুসফুসের মূল শক্তি বা ‘ছি’র উপর আধিপত্য বিস্তার করে এবং ত্বকে তা প্রকাশ পায়। ফুসফুস আক্রান্ত হওয়ার পর এর জলের পথ নিয়ন্ত্রণের কার্যকারিতা বিঘ্নিত হয়। ফলে ফুসফুসে পানি জমতে এবং কফ তৈরি হতে শুরু করে। বাহ্যিক প্যাথোজেনিক উপাদানের কারণে হাঁপানির আক্রমণ সবচেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যখন তাপমাত্রা কম থাকে বা আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন হয়। বাহ্যিক প্যাথোজেনিক কারণগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে ফলের পরাগ, সিগারেটের ধোঁয়া বা অন্য কোনো অ্যালার্জেন।