মহাকাশে প্রথম চলচ্চিত্র ‘দ্য চ্যালেঞ্জ’
২০২১ সালের ৫ অক্টোবর মানব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি বিশেষ দিন।
এই দিনে মাত্র দুই সদস্য নিয়ে গঠিত একটি চলচ্চিত্র দল রাশিয়ান ‘সুয়ুজ এমএস-১৯’ মহাকাশযানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) পৌঁছায়। পরবর্তী ১১ দিনের মধ্যে তারা মহাকাশে প্রথমবারের মতো চলচ্চিত্র নির্মাণের কার্যক্রম সম্পন্ন করেন।
সম্প্রতি, ‘দ্য চ্যালেঞ্জ’ নামক এই চলচ্চিত্রটি চীনের মূল ভূখণ্ডে প্রদর্শিত হয়েছে। অভিনেত্রী ইউলিয়া পেরেসিল্ড ছবিটির প্রচারের জন্য বেইজিংয়ে আসেন। মাত্র তিন দিনের মধ্যে তিনি নিজেকে ম্যান্ডারিনে ‘স্পেস সিস্টার’ হিসেবে পরিচয় দিতে শিখেছেন। চীনা ভক্তরা তাকে ‘স্পেস সিস্টার’ এই ডাকনাম দিয়েছেন। তিনি নানলুওকু ল্যানে, গ্রেটওয়াল, ড্রাম টাওয়ারসহ নানা দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করেন, চীনের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞান অনুরাগীদের সাথে আড্ডা দিয়েছেন এবং তিন বছর আগে ইতিহাস সৃষ্টিকারী সেই মহাকাশ ভ্রমণের কথা স্মরণ করেছেন।
চলচ্চিত্রটির প্লট জটিল নয়। এতে এমন একটি গল্প বলা হয়, একজন মহাকাশচারী মহাকাশ ক্যাপসুলের বাইরে কাজ করার সময় দুর্ঘটনাক্রমে আহত হন। তাকে অস্ত্রোপচার করতে, একজন সার্জনকে জরুরিভাবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনিই চলচ্চিত্রটির নায়িকা। আহত মহাকাশচারীর শারীরিক অবস্থার কারণে তখন অস্ত্রোপচারের জন্য পৃথিবীতে ফিরেয়ে আনা কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। পুরো গল্পটি জীবন বাঁচানোর জন্য সময়ের সঙ্গে দৌড়ের উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশকে তুলে ধরেছে।
মহাকাশে অভূতপূর্ব এ পরিস্থিতির দৃশ্যায়নের কারণে, দর্শকরা বড় পর্দায় দেখতে পান, মহাকাশচারীরা পৃথিবী থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কীভাবে বসবাস ও কাজ করে থাকেন।
তিন বছর আগে পেরেসিল্ড তিন হাজার প্রার্থীর মধ্য থেকে চলচ্চিত্রটিতে অভিনয়ের জন্য নির্বাচিত হন এবং একটি রাশিয়ান মহাকাশচারী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সাড়ে তিন মাসের নিবিড় প্রশিক্ষণ নেন। তারপর একজন গাইডের সাহায্যে তিনি এবং সিনেমার পরিচালক ক্লিম শিপেনকোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে উড়ে যান। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছানোর পর রাশিয়া ও অন্যান্য দেশের সাতজন মহাকাশচারী তাদের স্বাগত জানান।
তার ঐতিহাসিক মহাকাশ যাত্রার আগে, পেরেসিল্ড তার দুই মেয়েকে একটি বিদায়ী চিঠি লিখেছিলেন। তিনি সম্প্রতি ‘ইটস স্পেস, বেবি!’ নামে তার মহাকাশ যাত্রা নিয়ে নতুন বইয়ের জন্য একটি ভিডিও শ্যুটিং করার সময় সেই বিদায়ী চিঠির কথা শেয়ার করেন। তার মহাকাশ যাত্রার কথা শুনে দুই মেয়ে তখন কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
পেরেসিল্ড হচ্ছেন প্রথম অভিনেত্রী, যিনি অভিনয়ের জন্য মহাকাশে যান। যদিও সেই অভিজ্ঞতার জন্য প্রচুর সাহসের প্রয়োজন ছিল এবং জানা-অজানা অনেক ঝুঁকি ছিল। কিন্তু আসলে মহাকাশে যাওয়ার পর তার অনেক মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আপনাকে মহাকাশে ওজন বাড়ার বিষয়ে চিন্তা করতে হবে না। একজন মহাকাশচারীর প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার ক্যালোরির প্রয়োজন হয়। যদিও পেরেসিল্ড মহাকাশে ক্লান্ত বোধ করেছিলেন, তবে তার ক্ষুধা ভাল ছিল এবং তিনি ভারী স্বাদযুক্ত খাবার পছন্দ করতে শুরু করেন। তিনি আরও দেখেছেন যে, আমেরিকান কেবিনে কফি ভাল ছিল, তবে রাশিয়ান কেবিনে টিনজাত খাবার ভাল।