বাংলা

মহাকাশে প্রথম চলচ্চিত্র ‘দ্য চ্যালেঞ্জ’

CMGPublished: 2024-04-04 10:09:16
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

২০২১ সালের ৫ অক্টোবর মানব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি বিশেষ দিন।

এই দিনে মাত্র দুই সদস্য নিয়ে গঠিত একটি চলচ্চিত্র দল রাশিয়ান ‘সুয়ুজ এমএস-১৯’ মহাকাশযানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) পৌঁছায়। পরবর্তী ১১ দিনের মধ্যে তারা মহাকাশে প্রথমবারের মতো চলচ্চিত্র নির্মাণের কার্যক্রম সম্পন্ন করেন।

সম্প্রতি, ‘দ্য চ্যালেঞ্জ’ নামক এই চলচ্চিত্রটি চীনের মূল ভূখণ্ডে প্রদর্শিত হয়েছে। অভিনেত্রী ইউলিয়া পেরেসিল্ড ছবিটির প্রচারের জন্য বেইজিংয়ে আসেন। মাত্র তিন দিনের মধ্যে তিনি নিজেকে ম্যান্ডারিনে ‘স্পেস সিস্টার’ হিসেবে পরিচয় দিতে শিখেছেন। চীনা ভক্তরা তাকে ‘স্পেস সিস্টার’ এই ডাকনাম দিয়েছেন। তিনি নানলুওকু ল্যানে, গ্রেটওয়াল, ড্রাম টাওয়ারসহ নানা দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করেন, চীনের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞান অনুরাগীদের সাথে আড্ডা দিয়েছেন এবং তিন বছর আগে ইতিহাস সৃষ্টিকারী সেই মহাকাশ ভ্রমণের কথা স্মরণ করেছেন।

চলচ্চিত্রটির প্লট জটিল নয়। এতে এমন একটি গল্প বলা হয়, একজন মহাকাশচারী মহাকাশ ক্যাপসুলের বাইরে কাজ করার সময় দুর্ঘটনাক্রমে আহত হন। তাকে অস্ত্রোপচার করতে, একজন সার্জনকে জরুরিভাবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনিই চলচ্চিত্রটির নায়িকা। আহত মহাকাশচারীর শারীরিক অবস্থার কারণে তখন অস্ত্রোপচারের জন্য পৃথিবীতে ফিরেয়ে আনা কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। পুরো গল্পটি জীবন বাঁচানোর জন্য সময়ের সঙ্গে দৌড়ের উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশকে তুলে ধরেছে।

মহাকাশে অভূতপূর্ব এ পরিস্থিতির দৃশ্যায়নের কারণে, দর্শকরা বড় পর্দায় দেখতে পান, মহাকাশচারীরা পৃথিবী থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কীভাবে বসবাস ও কাজ করে থাকেন।

তিন বছর আগে পেরেসিল্ড তিন হাজার প্রার্থীর মধ্য থেকে চলচ্চিত্রটিতে অভিনয়ের জন্য নির্বাচিত হন এবং একটি রাশিয়ান মহাকাশচারী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সাড়ে তিন মাসের নিবিড় প্রশিক্ষণ নেন। তারপর একজন গাইডের সাহায্যে তিনি এবং সিনেমার পরিচালক ক্লিম শিপেনকোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে উড়ে যান। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছানোর পর রাশিয়া ও অন্যান্য দেশের সাতজন মহাকাশচারী তাদের স্বাগত জানান।

তার ঐতিহাসিক মহাকাশ যাত্রার আগে, পেরেসিল্ড তার দুই মেয়েকে একটি বিদায়ী চিঠি লিখেছিলেন। তিনি সম্প্রতি ‘ইটস স্পেস, বেবি!’ নামে তার মহাকাশ যাত্রা নিয়ে নতুন বইয়ের জন্য একটি ভিডিও শ্যুটিং করার সময় সেই বিদায়ী চিঠির কথা শেয়ার করেন। তার মহাকাশ যাত্রার কথা শুনে দুই মেয়ে তখন কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।

পেরেসিল্ড হচ্ছেন প্রথম অভিনেত্রী, যিনি অভিনয়ের জন্য মহাকাশে যান। যদিও সেই অভিজ্ঞতার জন্য প্রচুর সাহসের প্রয়োজন ছিল এবং জানা-অজানা অনেক ঝুঁকি ছিল। কিন্তু আসলে মহাকাশে যাওয়ার পর তার অনেক মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আপনাকে মহাকাশে ওজন বাড়ার বিষয়ে চিন্তা করতে হবে না। একজন মহাকাশচারীর প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার ক্যালোরির প্রয়োজন হয়। যদিও পেরেসিল্ড মহাকাশে ক্লান্ত বোধ করেছিলেন, তবে তার ক্ষুধা ভাল ছিল এবং তিনি ভারী স্বাদযুক্ত খাবার পছন্দ করতে শুরু করেন। তিনি আরও দেখেছেন যে, আমেরিকান কেবিনে কফি ভাল ছিল, তবে রাশিয়ান কেবিনে টিনজাত খাবার ভাল।

মাত্র দুই জন নিয়ে গঠিত অতি ছোট দলের একজন সদস্য হিসেবে পেরেসিল্ডকে নিজেই নিজের মেকআপ করতে হয়েছিল। কারণ মহাকাশে ওজনহীনতা রয়েছে, তিনি প্রতিটি প্রসাধনী পণ্যের পিছনে আঠালো হুক স্থাপন করেছিলেন, যাতে বোতল এবং জারগুলো ভাসতে না পারে।

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের কেবিনে জানালা দিয়ে বাইরের মহাকাশের বিশালতা দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু খুব কম লোকই হয়তো জানেন যে, ওই দৃশ্যের দিকে তাকানোও ঝুঁকিপূর্ণ। বেইজিংয়ে চলচ্চিত্রটির প্রিমিয়ারের পর পেরেসিল্ড স্মরণ করেন যে, তারা রাশিয়ান কেবিনের জানালা দিয়ে দেখেছিলেন যে, পৃথিবী এবং সূর্য একে অন্যের ওপর প্রায় লেপ্টে যাচ্ছে, প্রান্তে শুধু একটি পাতলা নীল রেখা রয়েছে।

দৃশ্যটি অত্যন্ত সুন্দর ছিল এবং পরিচালক সেই দৃশ্য ধারন করার করতে চান। কিন্তু তিনি জানালার পাশে হেলান দিয়ে মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে রোদে পুড়ে যান। কারণ মহাকাশে পৃথিবীর ওজোন স্তরের কোন সুরক্ষা নেই, মহাকাশে অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণ খুবই শক্তিশালী।

আরো উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো ‘দ্য চ্যালেঞ্জ’ সিনেমার সদস্যদের এই অসাধারণ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তারা টম ক্রুজ এবং হলিউডের আগে মহাকাশে একটি সিনেমা দৃশ্যায়ন করার কৃতিত্ব অর্জন করেন। ২০২০ সালের প্রথম দিকে এমন খবর ছিল যে, টম ক্রুজ এবং পরিচালক ডগ লিমান ইলন মাস্কের স্পেসএক্স প্রকল্পটির সাহায্যে মহাকাশে চলচ্চিত্রের শ্যুটিং করবেন। কিন্তু ওই পরিকল্পনাটি এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। তবে রাশিয়ান ক্রুরা মহাকাশ থেকে ফিরে আসার পর টম ক্রুজ পরিচালক শিপেনকোকে ফোন করে মহাকাশে শ্যুটিং করার বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছিলেন।

গত বছরের নভেম্বর মাসে পরিচালক শিপেনকো সিয়ামেনে ২০২৩ সালে চায়না গোল্ডেন রোস্টার অ্যান্ড হান্ড্রেড ফ্লাওয়ার ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল চালাকালে চীনে এসেছিলেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে তিনি চীনের গ্রেটওয়াল দেখেছেন এবং দিনে কয়েকবার দেখতে পেয়েছেন।

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনটি ২৪ ঘন্টায় ১৬ বার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে এবং ১৬টি সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের অভিজ্ঞতা লাভ করে। তাই পরিচালক প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর সকলের চেয়ে দ্রুতগতিতে পৃথিবীর চারপাশে ‘ভ্রমণ’ করেন এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো দেখতে পান।

লিলি/হাশিম

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn