তুষারময় আকাশের নীচে যে ৬৬ হাজার বার ছবি প্রদর্শনের পিছনে
সেই সময়ে পশুপালকদের সাংস্কৃতিক জীবন তেমন একটা ছিল না। গ্রামবাসীরা এমনকি তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে অন্ধকারে দশ মাইলেরও বেশি পথ হেঁটে পাশের গ্রামে গিয়ে একটি সিনেমা দেখতে পারত। এমনকি তুষারপাতের মধ্যেও তারা কষ্ট করে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যেতো। ছবির শেষে সবাই পর্দার পাশে নাচতেন এবং আকাশ ভরা তারা’র নীচে একসাথে নাচগানের মাধ্যমে আনন্দ করতেন।
সে সময় লুও চু ছিলেন সবার হৃদয়ে ‘সবচে জনপ্রিয় মানুষ’। স্ক্রিনিং শেষে শিশুরা প্রায়ই তাকে ‘আরেক দিন থাকা’ এবং ‘আরো একবার দেখানোর’ অনুরোধ করত। তার হাঁটা ট্র্যাক্টরে পর্দা, প্রজেক্টর, ফিল্ম, জেনারেটর, সেইসাথে খাবার ও বিছানাপত্র বহন করা হয় এবং একবার ঘুরে বেড়ানোর মিশনে তার তিন মাসেরও বেশি সময় লাগতো।
পরবর্তীতে, লুও চু-এর প্রদর্শিত চলচ্চিত্রগুলো পুরানো ফিল্ম থেকে রঙিন ডিজিটাল ছবিতে পরিবর্তন হয়। চলচ্চিত্রের ধরনও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। অ্যাকশন চলচ্চিত্র, যুদ্ধের চলচ্চিত্র, পশুপালন সম্পর্কিত বিজ্ঞান প্রচারকারী চলচ্চিত্র এবং তিব্বতের স্বাধীনতা ও জাতিগত ঐক্যের ইতিহাস সম্পর্কিত চলচ্চিত্র প্রভৃতি। কৃষক ও পশুপালকরা এমনকি সিনেমার তালিকা আগে থেকেই বেছে নিতে পারতেন এবং গ্রামে সিনেমা দেখার জন্য ‘অর্ডার’ করতে পারতেন।
একই সময়ে টিভি ও মোবাইল ফোন ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং সিনেমা দেখার জন্য গ্রামে জড়ো হওয়া এখন আর একমাত্র বিনোদনের উপায় নয়। কিন্তু লোকেরা এখনও লুও চু’র আগমনের প্রত্যাশা করেন, যেন তারা স্মৃতিতে একটি অনুষ্ঠানের জন্য অপেক্ষা করছে। গত ৩৭ বছরে লুও চু তাদের জন্য মালভূমিতে অবস্থিত গ্রামগুলোর রাতের জীবনকে আলোকিত করেছিল এবং উত্তর তিব্বত মালভূমিতে পশুপালকদের সঙ্গে আলোছায়া জগতের একটি সেতু তৈরি করেছেন।