চীনের তুংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গ
১৯৫১ সালে চীনের শাংহাই মহানগরে তুংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন দেশের টেক্সটাইল শিল্পের উন্নয়নের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় এই বিশ্ববিদ্যালয়। তখন চীনের তুলা উত্পাদনের পরিমাণ ছিল কম, যা থেকে দেশের চাহিদা মিটতো না। তাই রাসায়নিক ফাইবার উপাদানের আবিষ্কার অনেক জরুরি কাজ হয়ে পড়ে। সেই সময় হুয়াতুং টেক্সটাইল প্রকৌশল একাডেমির উপ-প্রধান ছিয়ান বাও জুনের নেতৃত্বে রাসায়নিক ফাইবার উপাদান গবেষণাকাজ শুরু হয়। গত শতাব্দীর ৬০-এর দশকে চীনে ‘তিছয়েলিয়াং’ নামের নাইলন টেক্সটাইল আবিষ্কৃত হয়।
তখন থেকে তুংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা টেক্সটাইল কাঁচামাল গবেষণায় মনোযোগ দিয়ে নব্যতাপ্রবর্তনের কাজ শুরু করেন। ১৯৯৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদল সাফল্যের সঙ্গে মহাশূন্যে ব্যবহৃত উচ্চ-বিশুদ্ধতাসম্পন্ন ভিসকস-ভিত্তিক কার্বন ফাইবার তৈরি করেন। তখন চীন বিশ্বের তৃতীয় দেশ হিসেবে এ প্রযুক্তি অর্জন করে। তারপর থেকে গবেষকদল রাষ্ট্রীয় উত্পাদিত উচ্চ-বিশুদ্ধতাসম্পন্ন ভিসকস-ভিত্তিক কার্বন ফাইবারের ওপর গুরুত্ব দেয়। সংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও কারখানার যৌথ প্রয়াসে উচ্চ মাত্রার কার্যকারিতাসম্পন্ন কার্বন ফাইবার (Dry jet wet spinning high performance carbon fiber) আবিষ্কৃত হয়। ফলে বিদেশি উচ্চ কার্যতকারিতার ফাইবার কোম্পানির একচেটিয়া ব্যবসা চীন ভেঙ্গে দেয়।
গত শতাব্দীর ৯০-এর দশকে চীন মানববাহী নভোযান প্রকল্পের গবেষণাকাজ শুরু করে। তখন থেকেই তুংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় চীনের মহাশূন্য গবেষণাকাজের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ চীনের স্বাধীন গবেষণার নভোযানের জন্য প্যাসিভেটেড গ্লাস, মহাশূন্যে নভোচারীদের কাপড়চোপড় তৈরির কাঁচামাল, নভোচারীদের প্রস্রাব সংগ্রহের যন্ত্রসহ অনেক গবেষণাকাজে জড়িত হয়। তাঁরা উচ্চ-কার্যকারিতার অতি সূক্ষ্ম ধাতুর তারের বিশেষ বয়ন প্রযুক্তি চীনের ‘পেইতৌ’ নেভিগেশন উপগ্রহের সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশে ব্যবহারে সক্ষম হন। তা ছাড়া, শেনচৌ মানববাহী নভোচারীদের জন্য তাঁরা বিশেষ পোশাক ডিজাইন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারাবাহিক গবেষণাকাজ চীনের মহাকাশ-গবেষণার বিকাশে অনেক অবদান রেখেছে।