ফিরে যাবার পথ
লং ছিয়াও স্টেশন লং ছিয়াও জেলায় অবস্থিত। জেলার নাম অনুযায়ী এ স্টেশনের নামকরণ করা হয়েছে। জেলার বাসিন্দারা এ ট্রেন স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করে। ছেন হুই ও তার পরিবারের ৫ সদস্য কাঁধে ও হাতে ১০টির বেশি লাগেজ নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ট্রেন স্টেশন বাসার সামনে, ট্রেন স্ট্রেশনে আসা মানে বাসায় পৌঁছে যাওয়া।
সন্ধ্যা ৬টা ১১ মিনিটে ট্রেনটি লং ছিয়াও স্টেশনে আসে। এ সময় অন্ধকার হয়ে এসেছে এবং বৃষ্টি হচ্ছে। তবে স্টেশনে বেশ ভিড় জমেছে পরিবার ও বন্ধুদের নিতে আসা মানুষের। লু তার মেয়েকে নিতে এসেছেন এবং ট্রেন আসার বেশ আগে থেকে তিনি এখানে অপেক্ষা করছেন। তিনি একজন রাজমিস্ত্রী এবং তার মেয়ে একজন শিক্ষক। মেয়ে শহরে কাজ করেন বলে বাবার সঙ্গে দেখা করার বেশি সময় পান না।
মেয়েকে দেখে লু তার দিকে হাত নাড়েন। তিনি মেয়ের হাত থেকে লাগেজ নেন এবং মেয়ে তার মাথার ওপর ছাতা ধরেন। দুজন মোটরসাইকেলে করে বাসার দিকে যাত্রা করেন। তাদের মুখে লেগে থাকে হাসি। একেকটি টিকিট এক বছরের স্মৃতি ও পরিশ্রম বহন করে। লি হং থাও বলেন, বসন্ত উত্সব ও লণ্ঠন উত্সবসহ সব উত্সবের সময়ে তাদের মতো ট্রেন স্টেশনের কর্মীরা ছুটি নিতে পারেন না। স্টেশনে মাত্র একজন যাত্রী থাকলেও তার জন্য সেবা দিতে হয় কর্মীদের।
ট্রেনে বসে যাত্রীরা লং ছিয়াওয়ের মতো অসংখ্যা ছোট স্টেশন অতিক্রম করেন আর অনেক কর্মী লি হং থাওয়ের মতো বাসায় ফেরার জন্য অপেক্ষা করেন।
হেই শা দ্বীপের বাসিন্দারা যদি ইয়াংসি নদীর ধারে ছাং পিংকে দেখেন, তারা বুঝতে পারেন যে তারা বাড়ির কাছে চলে এসেছেন। ছাং পিং নৌকার একজন ক্যাপ্টেন এবং প্রায় সব যাত্রীর সঙ্গে তিনি পরিচিত। কারণ হেই শা ছোট একটি দ্বীপ, যেখানে বাস করে ১০ হাজারের কিছু বেশি মানুষ। প্রতি বছরের বসন্ত উত্সবের সময় মানুষ বাইরে থেকে ২০ বর্গকিলোমিটারের এই দ্বীপে ফিরে আসে। সেখানে কোনও সেতু নেই। দ্বীপে ফিরতে চাইলে ছাং পিংয়ের সাহায্য লাগে। বাহান্ন বছর বয়সী ছাং পিং তার পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের ফেরিম্যান। দাদার কাঠের নৌকা থেকে তার পরিবার সব সময় যাত্রী পারাপারের কাজ করছে। পারাপরের জন্য প্রতি টিকিটের মূল্য ৪ ইউয়ান এবং প্রতিদিন ছাং পিং ২০ বারের মতো তীর ও দ্বীপের মধ্যে আসা-যাওয়া করেন। হেই শা দ্বীপের বাসিন্দাদের জন্য নৌকাই বাইরে যাবার একমাত্র বাহন। লুও চিয়ে এ নৌকার একজন কর্মী। আটচল্লিশ বছর বয়সী লুও চিয়ে প্রায় সব যাত্রীর সঙ্গে পরিচিত।
হ্য মিন এ দ্বীপের বাসিন্দা। তিনি অনেকবার ছাং পিংয়ের নৌকায় চড়েছেন। ছোটবেলায় হ্য মিন নৌকায় করে বাইরের বিশ্ব দেখতে চেয়েছিল আর এখন তিনি সব সময় স্বপ্নে বাসায় ফেরার নৌকা দেখেন। নদী ও নৌকা তার জীবনের একটি অংশে পরিণত হয়েছে। ছাং পিং জানান, প্রতিদিন গড়ে ১ শর মতো যাত্রী তার নৌকায় চড়ে আর বসন্ত উত্সবের সময় যাত্রীসংখ্যা ২০০ পর্যন্ত হয়। এ কাজের মাহাত্ম্য নিয়ে ছাং পিং বলেন, সবাইকে দ্বীপে পৌঁছে দেওয়া মানে তাদেরকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া। মানুষদের বাসায় ফেরাতে পারাই এ কাজের মাহাত্ন্য বলে তিনি বিশ্বাস করেন।