ফিরে যাবার পথ
বুলেট ট্রেনের তুলনায় এ ট্রেনের কোচ একটু ছোট আর ভেতরে স্পেস কম। যাত্রীরা মুখোমুখি বসে বলে স্বাভাবিকভাবে সবাই আড্ডা দিতে দিতে ভ্রমণ করতে পারে। যেখান থেকেই আপনি আসেন না কেন - এ যাত্রাপথে অন্যদের বন্ধু হতে পারেন। এখানে শীততাপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকলেও ঠাণ্ডাও লাগবে না। কারণ মানুষের মধ্যে ব্যবধান কম, মনের ব্যবধানও কম।
বসন্ত উত্সবের সময়ে ভ্রমণের চাহিদা বাড়ে। স্লো ট্রেন এ চাহিদা পূরণ করতে পারে। স্লো ট্রেনের কর্মীরা খুব যত্নশীল। চীনা রেল শাংহাই কোম্পানির হ্য ফেই যাত্রীবহন বিভাগের ৫জন কর্মী সকাল থেকে ট্রেনের সব জানালায় বসন্ত উত্সবের পেন্টিং লাগান এবং লণ্ঠন ঝুলান।
পানি সরবরাহ কর্মী উ প্রতিটি যাত্রীকে গরম পানি দেন এবং তিনিও ট্রেনের ঘোষকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নিজে প্রবন্ধ লেখেন এবং সবাইকে পড়ান।
পুরো যাত্রায় প্রতি মিনিটে জানালার বাইরের দৃশ্যে কী পরিবর্তন হয় তা মনে করতে পারেন ৪২ বছর বয়সী ক্যাপ্টেন চাও লি ইয়াং। তিনি বলেন, স্লো হলেও এ যাত্রায় দেখা মেলে তাবিয়ে পাহাড়, ইয়াংসি নদী এবং বিশাল সমতল ভূমি।
এ ট্রেনে প্রথম কোচ থেকে শেষ কোচ পর্যন্ত চাও লি ইয়াং ১০ বারের মতো আসা-যাওয়া করতে করতে যাত্রা শেষ হয়ে যায়। দীর্ঘ এ সময়ে তিনি যাত্রীদের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। নিয়মিত যাত্রীদের তিনি চেনেন; তাদেরকে বসন্ত উত্সবের শুভেচ্ছাও জানান।
উল্টো দিক থেকে যদি একটি বুলেট ট্রেন আসে, তাহলে এ স্লো ট্রেনে একটু নড়াচড়া হয়। ট্রেনের প্রধান ইউয়ু বলেন, “বুলেট ট্রেনের গতি আমাদের ট্রেনের চেয়ে অনেক বেশি। তবে আমরা বেশি সময়ের সাথী। চীনা মানুষের কাছে বসন্ত উত্সব মানে পুনর্মিলন ও ভালবাসা। জন্মস্থানমুখী যাত্রা সব সময় ভালো লাগে – তা দ্রুত হোক আর ধীর হোক।
লবি থেকে কয়েক পা গেলে টিকিট চেকিং এলাকা। টিকিট অফিসও সেবাকেন্দ্র। হ্য ফেই শহরের লং ছিয়াও স্টেশন এ রেলপথের চতুর্থ শ্রেণীর একটি স্টেশন। এবার বসন্ত উত্সবের সময় হ্য ফেই দক্ষিণ ট্রেন স্টেশনে প্রতিদিনের যাত্রীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৫ হাজারে এবং ১০০ কিলোমিটার দূরে লং ছিয়াও স্টেশনের প্রতিদিনের যাত্রীর সংখ্যা পৌঁছায় ২০০ জনে। লং ছিয়াও স্টেশনের প্রধান ৫৬ বছর বয়সি লি হং থাও জানান, সকাল ৮টা ও বিকাল ৬টা - দুবার ট্রেন আসে এবং স্টেশনে ৩ মিনিটের মতো দাঁড়ায়। তার মানে এই ৬ মিনিট ছাড়া, সারা দিন এ স্টেশনে খালি থাকে। তবে ৬ মিনিটের মতো কর্মীরা এখানে কাজ করেন। লি হং থাও জানান, শুরুতে এখানে কাজ করার সময় একটু নিঃসঙ্গ লাগত কিন্তু এখন তিনি এ স্টেশনে কাজ করতে পছন্দ করেন। এগার জন কর্মী এ স্টেশনে কাজ করেন তবে বড় স্টেশনের মতো তারাও যাত্রীদেরকে উচ্চ মানের সেবা প্রদান করেন।