পুরান বই কোথায় যায়?
২০২৩ সালের শরত্কাল থেকে শাংহাই শহরের সু চৌ নদীর পাশে চেরি ফুল ভ্যালি পুরান বইয়ের মেলা চালু হয়। মেলায় আসেন দুই প্রবীণ ব্যক্তি। তবে সেখানে তারা পুরান বই কেনেন না, বরং নিজের পুরান বইয়ের জন্য একটি নতুন ‘বাসা’ খোঁজেন। সু দাদা জানান, তিনি ও তার স্ত্রী বই ভালবাসেন এবং বিয়ের সময় থেকে দুজন অনেক বই কিনেছেন। বাসায় বইগুলো রাখতে বড় দুটো বইয়ের আলমারি কিনেছিলেন। এখন তাদের বয়স হয়েছে এবং যুবকরা তেমন বই পড়েন না। তাই তারা নিজেদের বইয়ের জন্য একজন নতুন মালিক খুঁজতে চান।
২০২৩ সালে, শাংহাইয়ের একটি প্রাচীন পত্র ও বইয়ের দোকানে আসেন একটি দম্পতি। তারা হংকংয়ে বাস করেন। তাদের ৯০ বছর বয়সী বাবা তাদের জন্য অনেক পুরান বই রেখে গেছেন। তার বাবা জানিয়েছেন, তিনি শাংহাইয়ের এ দোকান থেকে সব বই কিনেছিলেন এবং তাদেরকে বইগুলো দোকানে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। তাদের মতো অবস্থা চীনে এখন খুব স্বাভাবিক। প্রবীণ ব্যক্তিরা মারা যাবার পর তাদের ছেলে-মেয়েরা এ বইগুলো এমন জায়গায় দিতে চান, যেখানে এগুলো কাজে লাগে।
একই বছর, শাংহাইয়ের একটি জাদুঘরের ডকুমেন্টেশন বিভাগের উপ-পরিচালক লিউ মিং হুই নাগরিক হটলাইনে একটি কল পান। কলটি করেছেন ওয়াং লিয়ান লিন নামের ৮০ বছর বয়সী এক ভদ্রমহিলা। তিনি ওই সংস্থাকে অপেরা সম্পর্কিত পাণ্ডুলিপি ও প্রকাশনা দান করতে চান। এসব বই তার স্বামী সংরক্ষণ করেছিলেন। তিনি একজন সংগীত অনুবাদক এবং শাংহাই অর্কেস্ট্রার পরামর্শদাতা ছিলেন। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে বিদেশি অপেরা ও সংগীত অনুবাদ করেছিলেন। ২০২২ সালের জুলাই মাসে তিনি মারা যাওয়ার পর স্বামীর এসব সংরক্ষণ কার কাছে রাখবেন এ ব্যাপার নিয়ে ওয়াং লিয়ান লিং চিন্তিত হয়ে পড়েন।
লিউ মিং হুই সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দাদি ওয়াংয়ের বাসায় গিয়ে এসব স্ক্রিপ্ট দেখেন। দেখেশুনে তারা জানান, এগুলোর মধ্যে ১ বাক্স হাত লেখা স্ক্রিপ্ট তাদের যাদুঘরে সংরক্ষণ করা সম্ভব, তবে বাকি প্রায় ৩০ বাক্স বই তারা নিতে পারবেন না। ওয়াং লিয়ান লিন চান আরও বেশি মানুষ এসব বই দেখুক। তাই প্রতিদিন তিনি বিভিন্ন সংস্থাকে ফোন দেন এবং আশা করেন, তারা এ বই নিবেন। পরে একটি প্রবীণ কমিউনিটি এ বইয়ের কিছু অংশ গ্রহণ করে এবং কমিউনিটি যাদুঘরে বিনামূল্যে প্রবীণদেরকে এ বই পড়ার সেবা প্রদান করে।