পশ্চিম মুখে আমার যাত্রা-পূর্ব ৩
আমরা সৌভাগ্যবান। কারণ এবারের সুযোগ ছাড়া হয়ত সারাজীবনে আর গ্যাং রেনপোচে আসতে পারবো না। বেইজিং থেকে এখানকার দূরত্ব ৪ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। এখানে আসতে যেমন অনেক সময় লাগে, তেমনি খরচও হয় অনেক। এখানে দাঁড়িয়ে আমি উপলব্ধি করতে পারি, কেন সবাই এই পবিত্র পাহাড়ে আসেন। আপনি যে ধর্মে বিশ্বাসী হোন না কেন, এখানে এলে উপলব্ধি করবেন, এখানে সবাই আকাশের খুব কাছাকাছি এবং তাদের মনভরা শান্তি।
যেদিন আমরা গ্যাং রেনপোচে যাই, সেদিন আমার শারীরিক অবস্থা বেশি ভাল ছিল। তাই ৪ হাজার ৭শ’ মিটার উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে লাইভ অনুষ্ঠান করলেও আমার কোন অসুবিধা হয় না। সেদিন আবহাওয়াও ভাল ছিল। সাধারণত উঁচু জায়গায় আবহাওয়া দ্রুত পরিবর্তিত হয়। অনেক মানুষ গ্যাং রেনপোচে আসলেও তাদের অনেকে কুয়াশার কারণে কিংবা পাহাড় মেঘে লুকিয়ে থাকার কারণে পবিত্র পাহাড় দেখতে পারেন না। তাই গ্যাং রেনপোচে দেখতে পাওয়াকে সৌভাগ্যের একটি প্রতীক বলে মনে করা হয়। আমাদের সেদিনের আরেকটি কাজ হলো ইয়াক পরিবহন দলের শুটিং। আসলে নাম থেকে আপনারা একটু বুঝতে পারছেন যে, এটি ইয়াক বা চমরি গরু দিয়ে তৈরি একটি পরিবহন দল। আগেই আমি বলেছি, প্রতি বছর চীন ও প্রতিবেশী নেপাল ও ভারত থেকে অনেক মানুষ এখানে এসে ‘ ছুয়ান শান’ করেন অর্থাৎ পবিত্র পাহাড়কে কেন্দ্র করে ঘোরেন। একবার ঘুরতে দু-তিন দিন সময় লাগে। পর্যটকরা নিজেদের অবস্থা অনুযায়ী নানা সেবা বাছাই করতে পারেন। যেমন ঘোড়ায় চড়ে ছুয়ান শান করতে পারেন। অবশ্য বেশির ভাগ মানুষই পায়ে হেঁটে ছুয়ান শান করেন। ইয়াক পরিবহন দল পর্যটকদের লাগেজ বহন করে সাথে সাথে যায়। তারা গ্যাং রেনপোচে এক বা দু রাতের মতো ঘুমায় আর সেখানে কোনও হোটেল বা বাড়িঘর নেই। মাঝখানে দু একটি সহায়তা কেন্দ্র ছাড়া আর কিছু নেই। তাই সবাইকে তাবু, পোশাক, খাবার ইত্যাদি নিয়ে যেতে হয়। এ জন্য লাগেজ খুব ভারী হয়। যদি মানুষ এগুলো বহন করে উঁচু জায়গায় হাঁটাহাঁটি করে, তবে তা কঠিন হবে। বিশেষ করে বিদেশি পর্যটকরা তিব্বতী খাবার খেতে পছন্দ করেন না। তারা রান্নার সরঞ্জাম নিয়ে আসেন। তাই তাদের জন্য ইয়াক পরিবহন দলের সাহায্য প্রয়োজন হয়। ইয়াক তিব্বতের সাধারণ এক ধরনের গরু। তবে তারা সাধারণ গরুর চেয়ে শক্তিশালী ও বড়। জানা গেছে, তিন বছর বয়স থেকে ইয়াক এমন লাগেজ বহনের কাজ করতে পারে। পোষা ইয়াক বুনো ইয়াকের চেয়ে ভিন্ন। মানুষের সঙ্গে এদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ এবং এরা মানুষকে ভয় পায় না। একটি ইয়াকের সঙ্গে থাকেন একজন গাইড। তিনি পর্যটকের সঙ্গে ছুয়ান শান করেন এবং ইয়াকের যত্ন নেন। এমন একটি ইয়াক ও একজন মানুষ নিয়োগ করলে প্রতিদিন খরচ হয় ৭০০ ইউয়ান। আমি গ্যাং রেনপোচেতে এমন ১০-১২টি ইয়াক দেখতে পাই, যারা বিদেশি পর্যটকদের লাগেজ নিয়ে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। আমি তাদের কাছে গিয়ে দেখি, তারা আমাকে ভয় পায় না। আমি হাত দিয়ে তাদেরকে স্পর্শ করি। খুব মজার একটি অভিজ্ঞতা! পাশে এক ভাই আমার ও ইয়াকের ছবি তুলতে সাহায্য করেন। ইয়াক দলের একজন মেয়ে আমাকে জানান, অদূরে দাঁড়িয়ে আছে একটি ইয়াক, যেটি সবচেয়ে শান্ত। জন্ম থেকে তার কোনও শিং নেই। তাই সহজে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়। বলা হয়, সাধারণত মানুষ ইয়াক চড়তে পারে না। তবে এ ইয়াকটি ছোট বাচ্চাও চড়তে পারে। কিছুক্ষণ পর ইয়াক দল রওনা হয়।