পরিবেশ দুষণে দায়ী কার্বন থেকে সার, কোক, বিয়ার তৈরি? লেখক: ইমরুল কায়েস
পৃথিবীর পরিবেশ দুষণ এবং ওজোন স্তর ধ্বংসে সবচেয়ে বেশি দায়ী কার্বণ গ্যাস। এটা আমাদের সবারই জানা। সংক্ষেপে এই গ্যাসকে কার্বণ বা গ্রীন হাউজ গ্যাসও বলা হয়ে থাকে। বিশ্বে শিল্পায়ন যত বেড়েছে কার্বণ নিঃসরনের পরিমাণ তত বেড়েছে। শিল্পোৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল, কয়লাসহ বিভিন্ন ফসিল ফুয়েল ব্যবহারের ফলে বাতাসে কার্বণ নিঃসরণ বাড়ছে। বিশ্বের সর্বোচ্চ কার্বণ নিঃসরণকারী দেশ হলো চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও রাশিয়া। উৎপাদন ও উন্নয়নের গতি ঠিক রেখে কার্বণ নিঃসরনের পরিমাণ কিভাবে কমানো যায় তা নিয়ে চিন্তা ও গবেষণার শেষ নেই বিজ্ঞানীদের। প্রতিবছরই বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে কার্বণ নিঃসরনের মাত্রা কমানো নিয়ে আলোচনা সমালোচনা ব্যাপক মাত্রায় হয়ে থাকে। নি:সৃত কার্বণ তিলে তিলে পৃথিবীর ওজোনস্তরকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ফলে ক্ষতিকর সুর্যরশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে এসে তাপমাত্রা বাড়িয়ে চলেছে। তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে ধীরে ধীরে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে পৃথিবীর নিচু দেশসমূহ অদুর ভবিষ্যতে ডুবিয়ে দেবে বলে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা। সেকারণে কার্বণ নিঃসরণ কমাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্পকারখানায় কয়লার ব্যবহার বন্ধে বড় বড় দেশগুলো থেকে নানাভাবে প্রতিশ্রুতি আদায় করতে চায় বিশ্ববাসী। যদিও এ ব্যাপারে এখনও ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারেনি প্রভাবশালী দেশগুলো। তবে এককভাবে কিছু কিছু দেশ কার্বণ নিঃসরণের মাত্রা কমাতে নানা পদক্ষেপ নেয়া অব্যাহত রেখেছে। দেশগুলোর মধ্যে চীন অন্যতম।
একসময় চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের পরিবেশ দূষণ ছিল মারাত্মক পর্যায়ের। তবে গত ১০ বছরে চীন সরকারের নেয়া নানা পরিবেশবান্ধব নীতি ও ব্যবস্থার ফলে বেইজিংয়ে এখন পরিবেশ দূষণ নেই বললেই চলে। এসব ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে বেইজিংয়ে দূষণমুক্ত জ্বালানীর যানবাহন চালু, রাজধানীল উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক বনায়ন, বেইজিংয়ের পার্শ্ববর্তী হুপেই প্রদেশে কয়লা নির্ভর ইস্পাত ও লোহার কারখানা বন্ধ করা, রান্না ও শিল্পকারখানায় কয়লার ব্যবহার কমানো, সৌর ও বায়ু থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানো ইত্যাদি। বর্তমানে চীন বায়ু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম। চলতি বছর ২০২২ সালে বেইজিংয়ে সরকার এক লাখ নতুন গাড়ীর নাম্বার প্লেট ইস্যু করেছে। এরমধ্যে ৭০ শতাংশই বরাদ্দ রাখা হয়েছে দূষণমুক্ত জ্বালানি চালিত গাড়ির জন্য। চীনের লক্ষ্য ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বণ নিরপেক্ষ বা জিরো কার্বণ নিঃসরণকারী দেশে পরিণত হওয়া। ২০৩০ সালের মধ্যে শক্তি উৎপাদনের ২৫ শতাংশ ফসিলজাত নয় এমন জ্বালানি থেকে আসবে বলে ঠিক করা হয়েছে। লক্ষ্য অর্জনে নানা ধরনের পরিবেশ বান্ধব নীতির সুফল পেতে শুরু করেছে চীনের বাসিন্দারা।