আকাশ ছুঁতে চাই ৬৪
দক্ষিণ পশ্চিম চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিচাং ।শত শত বছর ধরে এখানে প্রচলিত ছিল ভূমিদাস প্রথা বা সার্ফডম। এই অমানবিক প্রথায় মানুষের উপর চলতো নির্যাতন। এখানে মানুষকে জোর করে আটকে রাখা হতো। তাদের দিয়ে কঠোর শ্রম করানো হতো। তাদের পেটভরে খাওয়া জুটতো না। পরনের কাপড় ছিল ছেড়াখোঁড়া। শীত নিবারণের তেমন কোন ব্যবস্থা ছিল না। পশুর খোঁয়াড়ের ভিতর কোনভাবে থাকতে হতো দাসদের। প্রাসাদে মনিবদের জন্য খাটতে হতো সারাদিন।
শিক্ষাগ্রহণের অধিকার ছিল না। রোগ হলে চিকিৎসাও জুটতো না। জীবনের কোন উজ্জ্বল দিক ছিল না।
শতাব্দিব্যাপী এই নির্যাতনের অবসান ঘটে ১৯৪৯ সালের চীনের মহান সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে। ১৯৫৯ সালে সিচাংয়ের অসংখ্য মানুষ মুক্তির স্বাদ পান। এদেরই একজন কেলসাং ছোড্রোন। এই নারীর জন্ম ১৯৩৪ সালে। শৈশবে তিনি ছিলেন স্থানীয় প্রাসাদের ভূমিদাসী। তার বাবা মাও ছিলেন ভূমিদাস। তাদের বাধ্য করা হতো কঠোর পরিশ্রম করতে। কাজ ছেড়ে চলে যাওয়ার অধিকার ছিল না। পালানোর চেষ্টা করলে চলতো নিষ্ঠুর নির্যাতন।
কেলসাংয়ের শৈশব ছিল যন্ত্রণাময়। দিনরাত সীমাহীন কঠোর শ্রম ও ক্ষুধা নিয়ে বেঁচে থাকা ছিল ভীষণ যন্ত্রণার। ভালোভাবে একবেলাও খেতে পারেননি কখনও। পরনের কাপড় ছিল শতছিন্ন। জুতা পায়ে প্রাসাদের ভিতরে ঢোকার অনুমতি ছিল না। থাকতে হতো খোঁয়াড়ের ভিতর। শীতে, ক্ষুধায় ও কঠিন শ্রমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন বালিকা কেলসাং। এক সময় কেলসাং ও প্রাসাদের অন্য দুজন ভূমিদাসী মেয়ে একসঙ্গে পালানোর পরিকল্পনা করেন। গভীররাতে চুপি চুপি পালিয়ে যায় তিনটি মেয়ে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। তিনজনেই ধরা পড়েন। কপালে আরও দুর্ভোগ নেমে আসে। নিষ্ঠুরভাবে প্রহার করা হয় তাদের।
১৯৫৯ সালের পর জীবনের মোড় ঘুরে যায়। মুক্তি মেলে দাসত্ব থেকে। নতুন জীবন গড়ে তোলেন কেলসাং। বিয়ে করেন। চার সন্তানের মা হন। স্বামীর সঙ্গে সুখী জীবন কাটান তিনি।
বর্তমানে কেলসাং তার নাতি নাতনিসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একটি দোতলা বাড়িতে থাকেন। তিনি তার অতীতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণ করেন। তবে বর্তমানের সুখী জীবনের জন্য তিনি বিপ্লবকে ধন্যবাদ দেন।
বলেন, ‘আমার জীবন থেকে ক্ষুধার কষ্ট চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়েছে।’
কেলসাংয়ের গল্প সিচাংয়ের অসংখ্য মানুষের উন্নত সুখী মুক্ত জীবনকে তুলে ধরে যারা অতীতে দাসত্বের শিকলে বাঁধা ছিলেন।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ
সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।
অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল