আকাশ ছুঁতে চাই ৬১
কণ্ঠ: আফরিন মিম
অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধরে রাখছেন গণপ্রতিনিধি লি লি
চীনের ৫৬ জাতির রয়েছে বিচিত্র সব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ ও তা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য অনেক বছর ধরে নিরলস কাজ করে চলেছেন কারুশিল্পী লি লি। তিনি ১৪তম জাতীয় গণকংগ্রেসের একজন প্রতিনিধি। চলুন দেখা যাক কিভাবে তিনি নিজের এলাকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে কাজ করছেন। শুনবো প্রতিবেদনে।
দক্ষিণ পশ্চিম চীনের কুইচোও প্রদেশের ছিয়ানসিনান পুয়ি এবং মিয়াও জাতির স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেকচার। এখানে বাস করেন একজন উদ্যোগী নারী লি লি। তিনি ১৪তম ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের একজন ডেপুটি। পুয়ি জাতির এমব্রয়ডারির বিশেষ ঐতিহ্যের একজন ধারক তিনি। এই অবৈষয়য়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে পৌছে দেয়ার কাজও করছেন তিনি।
বসন্ত উৎসবের ছুটিতে অনেক পর্যটক ছিয়ানসিনান প্রিফেকচারে এসেছেন। তারা এখানকার সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার পাশাপাশি স্থানীয় সংস্কৃতি বিষয়েও জানতে পারেন। লি লি প্রায়ই শহরে এসে খোঁজ খবর নেন। এথনিক হস্তশিল্পের সামগ্রী কিরকম বিক্রি হচ্ছে, ক্রেতারা কি ধরনের জিনিস চান সে বিষয়ে তিনি জানতে চান।
লি লি বলেন, ‘জরিপ নিয়ে আমি বুঝতে পারি অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সামগ্রীগুলোর প্রতি মানুষের বিপুল আগ্রহ রয়েছে কিন্তু এই কারুশিল্পে তৈরি সামগ্রী ও পোশাকগুলো তরুণ প্রজন্মের কাছে খুব আকর্ষণীয় নয়। ফলে আমরা নানা রকম সৃজনশীল পদ্ধতিতে এমন পোশাক ও ব্যবহার্য সামগ্রী তৈরি করি যা একই সঙ্গে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও বহন করছে সেইসঙ্গে আকর্ষণীয়ও হচ্ছে।’
২০২৩ সালে দেশের শীর্ষ আইনসভা এনপিসির বার্ষিক সভা ‘দুই অধিবেশনে’ এ দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক পরামর্শ প্রতিষ্ঠিান সি পি পি সি সির জাতীয় কমিটিতে লি লি এথনিক মাইনরিটি এলাকার মানুষের কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের প্রস্তাব করেন।
দুই মাস পরে জনসম্পদ ও সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় লির প্রস্তাবের উত্তর দেয় এবং সংখ্যালঘু জাতির মানুষদের কারিগরি দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণসহ আরও কিছু পদক্ষেপ নেয়। কুইচোও প্রদেশে এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ফলে হাজারো মানুষের জীবনে পরিবর্তন আসে।
লু মিংহুয়া একজন গ্রামবাসী । তিনি বলেন, ‘আমি আগে হাতে এমব্রয়ডারি করতাম। এতে এক পিস কাপড় বানাতে ৩০ থেকে ৪০ ঘন্টা সময় লাগতো। সেলাই মেশিন চালাতে শেখার পর এখন একটা এমব্রয়ডারি পিস বানাতে আমার আধা বেলা লাগে। এমব্রয়ডারি প্রশিক্ষকরা আমাকে স্টাইল আর রঙে পরিবর্তন আনতে শিখিয়েছেন। যেমন, এই এমব্রয়ডারির টুকরাটি একটা বেল্টে সেলাই করে আটকানো যাবে। এটি কোট বা ড্রেসের সঙ্গে মানাবে। আমার দক্ষতা বাড়ানোর ফলে আমি মাসে ৩০ থেকে ৪০টি এমন এমব্রয়ডারি পিস বিক্রি করতে পারি। ’
গত এক বছরে ছিয়ানসিয়ান পুয়ি ও মিয়াও স্বায়ত্ত শাসিত প্রিফেকচারের ছিংলং কাউন্টির আমেইছিথুও টাউনে আটটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনশর বেশি নারী অংশ নিয়েছেন। তারা এমব্রয়ডারি আগে থেকেই জানতেন। কিন্তু জানতেন না আধুনিক কলাকৌশল, প্রযুক্তি এবং বাজারজাত করার পদ্ধতি।
লি মেইচেন একজন এমব্রয়ডারি শিল্পী । তিনি বলেন, ‘আমি সারাজীবন এই শিল্প নিয়ে কাজ করেছি। কিন্তু এখন আমার চোখ দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, হাঁত কাঁপে। সময়ের সঙ্গে আমার রুচির মিল হয় না। আশাকরি তরুণ প্রজন্মের আরও বেশি মানুষ আমাদের কাছ থেকে কৌশলটা শিখে নিবে এবং তাদের নিজস্ব উপায়ে এ্ই ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ’
লি ছোটবেলা থেকেই বয়স্ক কারুশিল্পীদের কাছে এই শিল্প শিখেছেন। তিনি নিজেই এই কারুশিল্পের একজন ধারক। কিন্তু তার আশংকা ছিল যে এই সমৃদ্ধ শিল্পটি হারিয়ে যেতে পারে। কারণ তরুণরা এটার বিষয়ে খুব বেশি আগ্রহ দেখায়নি। তরুণদের আগ্রহ জাগাতে লি লি প্রবীণ কারুশিল্পীদের লাইভ স্ট্রিমিং কৌশল শিক্ষা দেন যেন তারা তাদের অনন্য দক্ষতা দেখাতে পারেন।
লি লি বলেন, ‘ বয়স্ক মানুষরা জানেন না সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফর্মে কিভাবে লাইভ স্ট্রিমিং করতে হয়। আমরা তাদের জন্য এই প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলো সমাধান করেছি এবং ঐতিহ্যবাহী পোশাক তৈরির পুরো প্রক্রিয়া লাইভ ব্রডকাস্ট করেছি। এইভাবে আমরা তরুণ প্রজন্মের কাছে অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পৌঁছে দিতে পারবো এবং কিভাবে এগুলো তৈরি করতে হয় তা শেখাতে পারবো। ’
এই বছরে দুই অধিবেশনে লি লি প্রস্তাব দিয়েছেন কিভাবে অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও শৈলী উন্নত করা যায় এবং আরও বেশি তরুণ প্রতিভাকে এই ঐতিহ্য ধরে রাখার কাজে আকৃষ্ট করা যায়। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও কারুশল্প যেন আগামি প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া যায় সেই লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন লি লি।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: রহমান
সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।
অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল