আকাশ ছুঁতে চাই ১১
কী আছে এবারের পর্বে
১. গৃহবধূ থেকে ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা
২. বইকে পুনর্র্জীবন দেন যে নারী
৩. নারী প্রত্নতাত্ত্বিক দল
নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারীর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।
গৃহবধূ থেকে ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা
গ্রামের একজন গৃহবধূ থেকে একজন সংগ্রামী নারী হয়ে উঠলেন চীনের অন্যতম সেরা চিলি সস ব্র্যান্ডের নির্মাতা। তার নাম থাও হুয়াবি। তবে লাও কান মা ব্র্যান্ডের নামেই তার পরিচিতি। চলুন শোনা যাক কিভাবে এই ব্র্যান্ড সৃষ্টি করলেন সাহসী নারী থা হুয়াবি। শুনবেন আমার তৈরি একটি প্রতিবেদন।
থাও হুয়াবি এক অনুপ্রেরণার নাম। নিজের নামের চেয়েও তিনি বেশি পরিচিত তার ব্র্যান্ড চিলি সস লাও কান মা নামে।
১৯৪৭ সালে চীনের কুইচোও প্রদেশের মেইথান কাউন্টির এক গ্রামে দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম। বেড়ে ওঠাও চরম দারিদ্র্যের মধ্যে। লেখাপড়াও শিখতে পারেননি অভাবের কারণে।
২০ বছর বয়সে স্থানীয় ভূতাত্ত্বিক দলের একজন হিসাব রক্ষকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। অভাবের সংসার হলেও দাম্পত্য জীবনে সুখী ছিলেন থাও। জন্ম হয় দুই ছেলের। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন থাওর স্বামী। স্বামীর চিকিৎসার খরচ ও দুই শিশু সন্তানকে প্রতিপালনের জন্য গৃহবধূ থাওকে রোজগারে নামতে হয়। তিনি শহরের একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ নেন। স্বামীর মৃত্যু হলে তিনি সন্তানদের দেখাশোনার জন্য নিজের ছোট শহরে ফিরে আসেন। সেখানে রাস্তার ধারে বসে ভাত এবং তরকারি বিক্রি করে সংসার চালানো শুরু করেন।
১৯৮৯ সালে থাও কুইইয়াং শহরে ছোট্ট একটি রেস্টুরেন্ট খোলেন। এখানে নুডুলস বিক্রি করা শুরু করেন। সাধারণ নুডুলসকে সুস্বাদু করার জন্য তিনি তার নিজস্ব রেসিপিতে তৈরি স্পাইসি হট সস এবং সয়াবিন যোগ করতেন। দরিদ্র ছাত্রছাত্রী ও ট্রাক চালকদের মধ্যে তার তৈরি খাবার খুব জনপ্রিয়তা পায়। কারণ সেটা স্বাদে ভালো, দামে কম। আর দরিদ্র শিক্ষার্থীদের তিনি একটু বেশি করে খাবার দিতেন, কখনও কখনও পয়সাও নিতেন না। তারা তাকে লাও কান মা বা বয়স্ক মা নামে ডাকা শুরু করে।
থাও খেয়াল করেন অনেকে তার দোকানে আসে শুধু সস কেনার জন্য। ১৯৯৬ সালে তিনি লাও কান মা নামে সস তৈরির একটি কারখানা খোলেন। তার বিশেষ রেসিপিতে তৈরি চিলি সস লাও কান মা দারুণ জনপ্রিয়তা পায়।
গত ২৭ বছরে লাও কান মা চীনের অন্যতম বৃহৎ চিলি সস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ১৩০ টি দেশ ও অঞ্চলে এই সস রপ্তানি হয়। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান ও সাউথ আফ্রিকায় এই ব্র্যান্ড খুব জনপ্রিয়। লাও কান মার বার্ষিক বিক্রি কয়েক বিলিয়ন ইউয়ান।
তার এই সাফল্যের রহস্য বিষয়ে থাও হুয়াবি বলেন, ‘আমি সবসময় গুণগত মানকে প্রাধান্য দেই। আমি সবসময় চেষ্টা করেছি ভালো কিছু তৈরি করে আমার ক্রেতাদের দিতে। কোম্পানির মুনাফার চেয়ে সুনাম আমার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
থাও হুয়াবি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির একজন সক্রিয় সদস্য। প্রবীণ এই নারী এখনও দারুনভাবে কর্মক্ষম এবং একদিকে যেমন ব্যবসা সামলাচ্ছেন তেমনি সমাজসেবামূলক কাজও করে চলেছেন।
বইকে পুনর্জীবন দেন যে নারী
প্রাচীন গ্রন্থকে ভালোবেসে নতুনভাবে তাদের জীবন দান করেন এক নারী। চলুন শোনা যাক তার কথা।
সং চিং একজন বইপ্রেমী নারী। তবে বিশেষভাবে তিনি ভালোবাসেন প্রাচীন পাণ্ডুলিপি। ৩৪ বছর বয়সী সং চাকরি করেন বেইজিংয়ে ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব চায়নার প্রাচীন বইয়ের পুনর্জীবন বিভাগে।
চীনের জাতীয় লাইব্রেরিতে রয়েছে ৩ মিলিয়ন প্রাচীন গ্রন্থ। এর মধ্যে আছে প্রাচীন পান্ডুলিপি, গ্রন্থ, এবং বিভিন্ন নথি ও দলিল। ২০১১ সালের আগের এসব পুরনো নথিপত্রে চীনের ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে।
প্রাচীন চীনের অনেক হাতে লেখা পান্ডুলিপি একেবারে ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। সেগুলোকে সংরক্ষের জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয়। এজন্য অনেক ধৈর্য, দক্ষতা ও মমতার প্রয়োজন।