বাংলা

আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ৫২-China Radio International

criPublished: 2021-12-16 15:18:27
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছেন এদেশের নারীরা। মুক্তিযুদ্ধে বাংলার বীর নারীদের অবদান নিয়ে এখন রয়েছে একটি বিশেষ কথিকা।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এদেশের সকল শ্রেণি, পেশা, অবস্থানের মানুষের সার্বিক জনযুদ্ধ ছিল। এ যুদ্ধে নারী পুরুষ উভয়েই সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে। কিন্তু এই জনযুদ্ধে নারীর কৃতিত্বের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি। একাত্তরে হানাদার পাকিস্তানি সৈন্যরা তিন লাখ নারীকে ধর্ষণ করেছে, বন্দি শিবিরে আটকে রেখে ভয়াবহ নির্যাতন করেছে এবং অসংখ্য নারীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তবুও তারা পাকিস্তানিদের সঙ্গে আপস করেননি। অনেকে জীবন দিয়েছেন তবু প্রকাশ করেননি মুক্তিযোদ্ধা স্বামী, ভাই, বাবা বা অন্যদের পরিচয়।

আবার অনেক নারী অস্ত্রহাতে যুদ্ধও করেছেন রণাঙ্গনে। শিরিন বানু মিতিল, তারামন বিবি, কাঁকন বিবি এমনই বীর নারীদের মতো আরও অনেকে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তাদের পরিচয় সেভাবে সামনে আসেনি।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল গেরিলা অপারেশনের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। যুদ্ধের খবর আদান প্রদান, অস্ত্র পৌঁছে দেওয়া, যোদ্ধাদের লুকিয়ে রাখা, বাড়িতে আশ্রয় দান, খাবার রান্না করে দেওয়া, পাকিস্তানিদের গতিবিধির খবর জোগাড় করা এসবই ছিল মুক্তিযুদ্ধের অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশটির সিংহভাগ করেছিলেন নারীরা। তারা এই ভূমিকা পালন করেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, চরম নির্যাতনের শিকার হওয়ার আশঙ্কা নিয়েই।

মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়া, খাবার সরবরাহ করা, অস্ত্র ও গোপন সংবাদ পৌঁছে দেওয়া এই প্রতিটি ভূমিকার জন্য অসংখ্য বাঙালি নারীকে পাকিবাহিনী হত্যা করেছে, ক্যাম্পে নিয়ে ধর্ষণ ও চরম নির্যাতন করেছে। কিন্তু নারীর এই বীরত্বের জন্য স্বাধীন দেশে তাঁকে তেমন কোনো স্বীকৃতিই দেওয়া হয়নি।

শরণার্থী শিবিরে অসুস্থদেরও সেবা দিয়েছেন নারী। ডা. সেতারা বীরপ্রতীক খেতাব পেলেও অন্য নারীরা কিন্তু কিছুই পাননি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রেও নমিতা ঘোষ, বুলবুল মহলানবীশসহ অনেক নারী কণ্ঠসৈনিক ছিলেন। তাদেরও রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা।

শাহিন সামাদ, লুবনা মরিয়মসহ বেশ ক’জন নারী পুরুষ একটি ট্রাকে করে মুক্তাঞ্চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা দিয়েছেন। প্রেরণা দিয়েছেন সাধারণ মানুষকে। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন যুদ্ধে যাওয়ার জন্য। বিদেশে বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বমতামত গড়ে তোলার জন্য যে প্রবাসী বাঙালিরা কাজ করেছেন তাদের মধ্যেও ছিলেন অনেক নারী। আতিয়া বাগমার, নূরজাহান মুরশিদসহ এই নারীরা মুক্তিযুদ্ধের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেছেন, জনমত গঠন করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধে যে নারীরা পাকিস্তানি বর্বরদের গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন পরবর্তিতে সবচেয়ে বেশি সামাজিক বৈরিতার শিকার হয়েছিলেন তারাই। ক্যাম্পে আটক একজন পুরুষ মুক্তিযোদ্ধার মতো একজন নারী মুক্তিযোদ্ধাও একইভাবে শারীরিক মানসিক চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তি কালে পুরুষযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠা পেলেও নারীকে দেওয়া হয়নি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। বরং তাকে ‘অচ্ছুত’, ‘সম্ভ্রম হারানো’ ইত্যাদি ভাবে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। অনেক নিপীড়িত নারী দেশ ছেড়ে চলে যেতেও বাধ্য হন।

যুদ্ধে নির্যাতনের শিকার নারীদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে অপেক্ষা করতে হয় চার দশকেরও বেশি সময়। তবে সকলে এখনও এই স্বীকৃতি পাননি। এই নারীরা বীরযোদ্ধা। তাদের যথাযথ সম্মান জানাতে হবে, স্বীকৃতি দিতে হবে। এবং তাদের বিভিন্ন সহায়তাও দিতে হবে। তাদের আত্মত্যাগের কথা প্রচার করতে হবে গৌরব সহকারে। তারা বাংলাদেশের জন্য গৌরবের। তারা মুক্তিযুদ্ধের বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা।

রোকেয়া পদক পেলেন যারা

উপমহাদেশে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এ বছরও প্রদান করা হয়েছে রোকেয়া পদক।

首页上一页123全文 3 下一页

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn