আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ৫২-China Radio International
আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ৫২
বিজয় দিবসের বিশেষ অনুষ্ঠান
কী থাকছে এবারের পর্বে
১. বিজয়ের অর্জনকে ধরে রাখতে হবে: সাক্ষাৎকার নাসরীন নঈম
২. বিজয়ের অর্ধশতকে কতটা এগিয়েছে বাংলার নারী: বিশেষ রিপোর্ট
৩. মুক্তিযুদ্ধে বাংলার বীর নারী: কথিকা
৪. রোকেয়া পদক পেলেন যারা
৫. চীনা শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে বাংলা গান
চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি ভালো আছেন। ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস। বিজয়ের ৫০তম বার্ষিকীতে আজকের এই বিশেষ অনুষ্ঠানে সবাইকে জানাই লাল-সবুজের দীপ্ত শুভেচ্ছা।
সাক্ষাৎকার:
বিজয়ের অর্জনকে ধরে রাখতে হবে: নাসরীন নঈম
আমাদের আজকের অতিথি প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও লেখক নাসরীন নঈম। তার কাছ থেকে আমরা শুনবো বিজয়ের গল্প। আমাদের অনুষ্ঠানে তাঁকে স্বাগত জানাই।
নাসরীন নঈম মনে করেন বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে মহান ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ ছিল বহু প্রত্যাশিত । কারণ এদেশের প্রতিটি মানুষ মনেপ্রাণে চেয়েছিল স্বাধীনতা। বালক থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকলেই মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছিল।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নাসরীন নঈম উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী ছিলেন। তার ছোট ভাই মুক্তিযুদ্ধে যান। তার দু’জন চাচাতো ভাইও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। যুদ্ধে তার একজন চাচাতো ভাই শহীদ হন।
মুক্তিযোদ্ধা ছোটভাই যখন খুব গোপনে রাতের অন্ধকারে বাড়ি আসতেন, নাসরীন তার জন্য লুকিয়ে দরজা খুলে দিতেন, খাবারের ব্যবস্থা করতেন, অস্ত্র লুকিয়ে রাখতেন। বিভিন্ন জায়গায় খবর পৌঁছে দিয়েও সহায়তা করেছেন।
নাসরীন নঈম বলেন, বাংলাদেশের নারীরা অস্ত্রহাতে অনেকেই রণাঙ্গনে গেলেও পুরুষের তুলনায় সম্মুখ সমরে তারা কম অংশ নিয়েছেন। কিন্তু গেরিলা যুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণই ছিল বেশি। মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য সরবরাহ করা, অস্ত্র লুকিয়ে রাখা, খবর আদান প্রদান করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো নারীরা করেছেন।
নাসরীন নঈম মুক্তিযুদ্ধের সময়কার স্মৃতিচারণ করেন। পরিবারের সঙ্গে নৌকা দিয়ে কেরানীগঞ্জ যাওয়ার সময় বুড়িগঙগা নদীতে দেখেছেন অসংখ্য ভাসমান মৃতদেহ। গণহত্যার নির্মম দৃশ্য তাকে অসুস্থ করে তুলেছিল। নিজেদের বাড়িতে অসহায় মানুষকে আশ্রয় দিয়েছেন। বিজয়ের আনন্দ দেখেছেন।
নাসরীন নঈম দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় ঢাকার নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। তার ছাত্রীদের তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অনুপ্রাণিত করেছেন, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
তিনি মনে করেন নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বিজয় দিবসের চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে। বিজয়ের অর্জনকে ধরে রাখতে হবে। শহীদদের, মুত্তিযোদ্ধাদের, নির্যাতনের শিকার নারীদের অনেক আত্মত্যাগ ও কষ্টের বিনিময়ে, অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ, প্রিয় মানচিত্র ও প্রাণপ্রিয় লাল সবুজ পতাকা। এই গৌরবকে হৃদয়ে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে।
নাসরীন নঈম তার লেখা গল্প, উপন্যাস ও কবিতায় মুক্তিযুদ্ধকে চিত্রিত করেছেন। অনুষ্ঠানে তিনি তার লেখা বিজয়ের কবিতা পাঠ করে শোনান।
বিজয়ের অর্ধশতকে কতটা এগিয়েছে বাংলার নারী
স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন অনেক। অবলীলায় বলা যায়, সার্বিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে। অর্ধশতকের পথ চলায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে। দেশের সর্বত্র সমানভাবে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে নারীরা। এ সুদীর্ঘ সময়ে নারীদের অবস্থান এক ঝলকে তুলে ধরছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের প্রতিবেদক।
এক আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ। ৫০ বছরের পথচলায় দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ আর্থ-সামাজিক প্রতিটি সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। দারিদ্র্য আর দুর্যোগের বাংলাদেশ এখন স্থান করে নিয়েছে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায়।গত ৫০ বছরের পথ চলায় দেশের সর্বত্র নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। নারীরা বেরিয়েছেন ঘর থেকে। পৌঁছে গেছেন বিমানের ককপিট থেকে পর্বতশৃঙ্গে। বাংলাদেশই দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম দেশ হিসেবে সর্বপ্রথম প্রাথমিক শিক্ষায় লিঙ্গ সমতা অর্জন করেছে। গত ৫০ বছরে এ দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা অবদান রেখেছে। বিশেষ করে নারী তার শ্রমের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে আসছে। নারীর শ্রমের একটি বিশাল অংশই শ্রমবাজারের পরিসংখ্যানের বাইরে থেকে যায়। কারণ নারী তার দিনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় গৃহস্থালি কাজে ব্যয় করে, যার কোনো সামাজিক স্বীকৃতি বা অর্থনৈতিক মূল্যায়ন হয় না।যদিও গত ৫০ বছরে এর মূল্যমান হিসাব করলেই বোঝা যায় অর্থনীতিতে এ ধরনের কাজের গুরুত্ব কতটা ব্যাপক। নারীর অবদান বিশ্লেষণ করতে চাইলে স্বীকৃত ও অস্বীকৃত উভয় প্রকার অবদানকেই বিবেচনায় আনা জরুরি বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
মুক্তিযুদ্ধে বাংলার বীর নারী