‘বিজনেস টাইম’ পর্ব- ০৮
বার্নেট আরও বলেন, গবেষণায় আরো দেখা যায়, চীনের প্রবৃদ্ধি এক শতাংশও গতিশীলতা লাভ করলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও গড় জিডিপির স্তর দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ে।
কম্বোডিয়ার রয়্যাল একাডেমির অধীনে অর্থনৈতিক পরামর্শদাতা কিন ফেয়া বলেছেন, ‘যেহেতু চীন বৈশ্বিক উৎপাদনে জড়িত ও ভ্যালু চেইন স্থিতিশীল রাখতে কাজ করে তাই চীনের প্রবৃদ্ধি বিশ্ব অর্থনীতিরও প্রবৃদ্ধি।’
মানসম্মত প্রযুক্তি
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব এবং বর্তমানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার চেয়ারম্যান বান কি মুন বলেন, ‘চীনের অর্থনীতি উচ্চগতির উন্নয়ন থেকে উচ্চমানের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আর তা এখন নতুন মানের উৎপাদন শক্তিকে উৎসাহ যোগাচ্ছে। ফলস্বরূপ উদ্ভাবনী, ভারসাম্যপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব ও উন্নয়নের দিক থেকে চীনের অর্থনীতি আরও এগিয়ে যাবে।’
গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগে টেকসই প্রবৃদ্ধির ফলে চীনের জাতীয় উদ্ভাবন সূচক ২০২৩ সালে সারা পৃথিবীতে দশম হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ভালো।
চীন এখন পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি, সৌরকোষের ফটোভোল্টাইক পণ্য, উন্নত পরিবহন প্রভৃতি রপ্তানি করছে। যার পরিমাণ ছিল ১ দশমিক শূন্য ৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (দেড়শ বিলিয়ন ডলার)। এ আয় বৃদ্ধির পরিমাণ ২৯.৯ শতাংশ।
এ ছাড়া চীন অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে যেমন: উচ্চগতির রেল, নতুন পণ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদিতেও এগিয়ে যাচ্ছে।
জ্বালানির পরিবর্তনে বিশ্বকে চীনের নেতৃত্বদানের কথা তুলে ধরেন গবেষকরা। তারা বলেন, বায়ু ও সৌর শক্তির ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া চীনের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক তৈরির সুযোগ দেখছে।
পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যৎ
জলবায়ু বিষয়ক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী ও সংস্থাগুলো এবারের বোয়াও সম্মেলনে বলেন, ‘সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তন ও এর ফল সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ছে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।’
অর্থনীতিবিদ এবং ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিকের অধ্যাপক বার্নার্ডো এম ভিলেগাস এক লিখিত সাক্ষাৎকারে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলায় চীন যেসব পণ্য ও প্রযুক্তির প্রচলন করেছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
।। প্রতিবেদন: ফয়সল আবদুল্লাহ
।। সম্পাদনা: শাহানশাহ রাসেল
ভিন দেশে চীন:
বাংলাদেশে চালু হয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠান নির্মিত দেশের বৃহত্তম বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প।
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দেওয়া হয়েছে। আর এর পরিপ্রেক্ষিতে সৌরবিদ্যুতের পর বায়ুশক্তিকেও কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে এবার দেশের বৃহৎ বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে কক্সবাজারে। চীনা প্রতিষ্ঠানের অর্থায়ন ও প্রযুক্তিতে নির্মিত বাংলাদেশের প্রথম বায়ুশক্তি প্রকল্প, কক্সবাজার বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়েছে।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজার সদর উপজেলার বাঁকখালী নদীর খুরুশকুল উপকূলে বেসরকারি উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে এই বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রকল্পটি চীনের উলিং পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেডের বিনিয়োগে নির্মাণ করেছে পাওয়া চায়না ছেংতু ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন লিমিটেড। চীনের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ইউএস–ডিকে গ্রিন এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের সমস্ত যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে চীন থেকে।
উলিং পাওয়ার কর্পোরেশনের বাংলাদেশ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক হেই চাও বলেন,
‘কক্সবাজার বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প বাংলাদেশকে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। পাশাপাশি ৪৪ হাজার ৬০০ টন কয়লার ব্যবহার এবং ১ লাখ ৯ হাজার ২০০ টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হ্রাস করবে, সেইসাথে ১ লাখ পরিবারের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাবে৷ প্রকল্পটি নির্মাণের সময়, আমরা বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি শিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য চীনা প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি।’
কক্সবাজারে বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রথম বাণিজ্যিক বায়ু বিদ্যুতের যুগে প্রবেশ করেছে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।