চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান
ভিনদেশে চীন:
মালয়েশিয়ার গাড়িশিল্পের ইলেক্ট্রিক রূপান্তর ঘটাচ্ছে চীন
সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: সারা বিশ্বের মতোই নিজ দেশের গাড়ি তৈরি শিল্পে জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে পরিবেশবান্ধব জ্বালানীতে রূপান্তর ঘটাচ্ছে মালয়েশিয়া। আর বিশাল এই কার্যক্রমে পাশে দাঁড়িয়েছে চীন।
চীনের বিদ্যুৎচালিত গাড়ি তৈরির অন্যতম প্রতিষ্ঠান গ্রেট ওয়াল মোটর –জিডাব্লিউএম এ বিষয়ে কাজ করছে মালয়েশিয়ায়। জিডাব্লিউএমের তৈরি করা অত্যাধুনিক বিদ্যুৎচালিত গাড়ি ‘ওরা গুড ক্যাট’ এখন বেশ জনপ্রিয় মালয়েশিয়ায়। চলতি বছরের শুরুর দিকে বেশ কয়েকজন গ্রাহক এ গাড়িটি অর্ডার করলে দ্রুত তাদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয় গাড়িটি।
২০২২ সালে প্রথম মালয়েশিয়ায় কোম্পানি স্থাপন করে জিডাব্লিউএম। গ্রেটওয়াল মোটর সেলস মায়েশিয়া’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক চুই আনকি জানান, আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ বাজার। বিশেষ করে এই দেশে গাড়ির অনেক ক্রেতা। কিন্তু পরিবেশবান্ধব জ্বালানীচালিত গাড়ির কথা বিবেচনায় নিলে বলা যায় এদেশের বাজার এখন এক বিশাল নীল সমুদ্র। কাজেই এই সম্ভাবনা আমরা কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করছি। এদিকে, গেল বছর চীনা গাড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডি আনুষ্ঠানিকভাবে মালয়েশিয়ায় তাদের উৎপাদন করা নতুন মডেলের গাড়ি ‘আট্টো-থ্রি’ উদ্বোধন করে।
মালয়েশিয়ান অটোমোটিভ অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশ করা তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালে মালয়েশিয়ায় বিদ্যুৎচালিত গাড়ি বিক্রি হয় ২ হাজার ৬৩১টি। অথচ ২০২১ সালে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি বিক্রির সংখ্যা ছিলো ২৭৪টি। অর্থাৎ ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে এ সংখ্যা বেড়েছে ৮৬০ শতাংশ।
এক বছরের ব্যবধানে মালয়েশিয়ায় পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎচালিত গাড়ির সংখ্যা বিপুল সংখ্যা বাড়ার পেছরে সরকারের নীতিসহায়তা ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে বলে জানান দেশটির বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী টেংকু জাফরুল টেংকু আব্দুল আজিজ। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে মালয়েশিয়ায় সংযোজন করা গাড়ির আমদানি শুল্ক ও বিক্রয় কর পুরো মওকুফ করা হয়েছে।
গাড়ি শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, প্রথাগত জ্বালানীর পরিবর্তে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি তৈরির যে ট্রেন্ড চলছে তার সঙ্গে তালমিলিয়ে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে মালয়েশিয়ার গাড়ি তৈরি শিল্পেও। মালয়েশিয়ার বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী টেংকু জাফরুল টেংকু আব্দুল আজিজ বলছেন, তার দেশের জাতীয় জ্বালানী নীতি অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে উৎপাদিত মোট গাড়ির ১৫ শতাংশ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে মোট উৎপাদিত গাড়ির ৩৮ শতাংশই বিদ্যুৎচালিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, ২০২৫ সালের মধ্যে মালয়েশিয়ায় ১০ হাজার পাবলিক চার্জিং সুবিধা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কোম্পানি প্রোফাইল:
চীনে কার্যক্রম বাড়িয়েই চলেছে জার্মান স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি
সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনে নিজেদের কার্যক্রম বাড়িয়েই চলেছে জার্মানির স্বাস্থ্যসেবাপণ্য উৎপাদনকারী জায়ান্ট কোম্পানি ফ্রেজেনিয়াস কাবি (নানছং) কোম্পানি লিমিটেড।
গেল ২০ বছর ধরে চীনের বাজারে ব্যবসা পরিচালনা করছে এই কোম্পানিটি। প্রতি বছরই এই কোম্পানির উৎপাদন করা পণ্যের বাজার বড় হচ্ছে। ফলে বছর বছর বিনিয়োগ ও কার্যক্রম বাড়াচ্ছে এটি।
জার্মানির ফ্রাংকুর্ট শহরের কাছে অবস্থিত বাড হমবুর্গভিত্তিক কোম্পানি ফ্রেজেনিয়াস কাবি। ২০০২ সালে এটি পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের রাজধানী নানছংয়ে কার্যক্রম ও বিনিয়োগ শুরু করে। এর পর থেকেই গেল ২০ বছরে একের পর এক নতুন পণ্য বাজারে এনেছে ফ্রেজেনিয়াস কাবি। এ জন্য এ পর্যন্ত অন্তত ৪ বার কোম্পানির কার্যক্রম বাড়িয়েছে এবং বিনিয়োগ করেছে ৫০০ মিলিয়ন ইউয়ান বা ৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে একটি স্বয়ংক্রিয় রক্তের উপাদান পৃথক করার উপাদান তৈরি নিয়ে কাজ করছে এটি।
ফ্রেজেনিয়াস কাবি (নানছং) কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক ছ্যাং কুয়াংচোং জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছর পণ্য উৎপাদন কার্যক্রমকে স্থানীয় পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হবে। ছ্যাং জানান, চীনের বিশাল বাজারে ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য পণ্যের চাহিদা পূরণে শিল্প চেইন ও ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে কাজ চলছে।
পরিসংখ্যান বলছে, চীনের বাজারে কোম্পানিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সক্রিয় পণ্যও এবং যন্ত্রপাতির চাহিদা চলতি বছর ৩৪ শতাংশ বেড়েছে যা গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। এসব পরিসংখ্যানের উদাহরণ টেনে কোম্পানিটির মহাব্যবস্থাপক ছ্যাং কুয়াংচোং জানান, চীনে ব্যবসার পরিবেশ ও বাজারে পণ্যের যে চাহিদা তাই কোম্পানিটিকে আরো বেশি বিনিয়োগে উৎসাহিত করছে। তার প্রত্যাশা, ২০২২ সালের তুলনায় চলতি বছর কোম্পানিটির রফতানি মূল্য ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।
চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রকাশ করা এক সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীন বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও উৎসাহিত করতে আরো নানামুখী পদক্ষেপ নেবে। বিশেষ করে চীনের বাজারে বিদেশি কোম্পানি ও তাদের প্রস্তুত করা পণ্যের প্রবেশ উৎসাহিত করতে সেবাখাতে আধুনিকায়ন করছে, বিদেশি বিনিয়োগের কোম্পানিগুলোকে দেশীয় কোম্পানিগুলোর মতোই সুবিধা দিচ্ছে।