বাংলাদেশে বর্ষায় অর্থনীতির ভিন্নমাত্রা
আফরিন মিম, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চলতি বছর নির্ধারিত সময়ের কিছুটা আগেই বাংলাদেশে আসে বর্ষা। ঋতুর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে সাধারণত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে মৌসুমি বায়ু আসে। আর তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে সময় লেগে যায় ওই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। তবে এবার মে মাসের শেষেই মৌসুমী বায়ু চলে আসে। শুরু হয় বর্ষা।
বর্ষার সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত বাংলাদেশের অর্থনীতি। বৃষ্টি আর বর্ষা মানেই মাটির উর্বরতা বেড়ে যাওয়া, ফসল বোনার সময় হওয়া আর নদীতে মাছের আনাগোনা বাড়তে থাকা। সারা বছর বৃষ্টির অভাবে শুকিয়ে যায় অনেক নদী, খাল-বিল ও হাওর। বর্ষা এলে প্রাণ ফিরে আসে সেখানে।
একসময় বাংলাদেশে বছরে হতো একটি ফসল, এই বর্ষায়। বৃষ্টির মিষ্টিপানির ছোঁয়ায় ফলানো ফসল আর মাছ দিয়ে সারা বছরের খাবারের চাহিদা মিটতো এখানকার মানুষদের। বাংলাদেশে প্রাচীনকালে যে বিখ্যাত মসলিন কাপড় বোনা হতো, তা–ও বড় নৌকায় করে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ত।
এখনো বাংলাদেশের দক্ষণাঞ্চলে যাতায়াতের প্রধান বাহন নৌকা, লঞ্চ। এমনকি উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের নদী তীরবর্তী মানুষের চলাফেরা ও পণ্য আনা নেওয়ার কাজ চলে নৌকায়। বিশেষ করে হাওরাঞ্চলে থৈ থৈ পানিতে দ্বীপের মতো ঘরবাড়িগুলোর বাসিন্দাদের প্রধান বাহন নৌকা। তাই তাদের দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্ম আর জীবিকার অন্যতম অনুসঙ্গ নৌপথ।
নদী পথের ঐতিহ্য আর বাণিজ্যের নানা বর্ণনা পাওয়া যায় ইতিহাসে। নিকট অতীতেও নদীর পানি বেড়ে গেলে বড় মাল বোঝাই নৌকা চলাচলের খবর পাওয়া যায়। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের জেলা যেমন নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ ব্যবহৃত হতো নৌপথের আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে। পূর্ব এশিয়া থেকে মসলা আর হরেক রকমের শৌখিন পণ্য আসার খবর মেলে। আবার বাংলাদেশের মসলিনসহ নানা পণ্য পরিবহনের খবর পাওয়া যায়। এখন নদী ও নৌরুটের সংখ্যা কমলেও সেই ঐতিহ্য ফুরিয়ে যায়নি। বরং এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া।